এখনই কাটছে না ভারতীয় রুপির সংকট

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অস্থিতিশীলতা ও তেলের উচ্চমূল্যের কারণে কমার ওপরই আছে ভারতীয় মুদ্রা রুপির দাম। এবছর মার্কিন ডলারের বিপরীতে এশিয়ার মধ্যে ভারতীয় রুপির মান সবচেয়ে বেশি কমেছে। মুদ্রাটির মান এ বছর ১২ শতাংশ কমে গেছে। আর সহসাই এ সংকট থেকে উত্তোরণও ঘটাতে পারবে না দেশটি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

86133840d16a4fbf93bb0a6d1cada1f5_18

খবরে বলা হয়, মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থান ও তেলের উচ্চমূল্যের কারণে ভারতসহ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রার দাম কমছে। এছাড়া ভারতের মোট রফতানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়ও রুপির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত বুধবার ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম রেকর্ড পর্যায়ের নিচে নেমে আসে। প্রতি ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মূল্য এসে দাঁড়িয়েছে ৭২.৯১ রুপিতে। এর তাৎক্ষণিক প্রভাব হিসেবে পেট্রোলিয়াম পণ্য, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও প্রকৌশল যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এটা সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে আর এই সংকট এখনই কাটছে না।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান রাবোব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হুগো এরকিন বলেন, ‘আরেক দফা মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবর্তী সময়ে রুপির দুর্বলতা কাটানোর জন্য ভারতকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা মনে করছি, ধীরগতিতে রুপির দাম কমে ডলারের বিপরীতে ৭৫ এ গিয়ে দাঁড়াবে।’

ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি শুক্রবার বলেছেন, সরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছে। উৎপাদন খাতে বিদেশি নিয়ম বাদ দেওয়া ও ব্যাংকগুলোর বিদেশি বন্ড বাড়ানোর নিয়মকে শিথিল করারও উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক পর্যালোচনা সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া শনিবার আরও কিছু পদক্ষেপের কথা জানানো হবে বলেও তিনি জানান।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে সম্প্রতি কয়েক মাসে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারত ছাড়াও তুরস্ক ও আর্জেন্টিনার মুদ্রার মান কমেছে। দেশ দুইটির দ্বন্দ্বের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বলে এমনটা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারত সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মোহান গুরুস্বামী বলেন, আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতা রুপির দুর্দশা বাড়িয়েছে। তিনি আল জাজিরা’কে বলেন, ‘সংকটটি চলমান রয়েছে। রুপির দাম কমা একটি বৈশ্বিক সংকটেরও অংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার বাণিজ্য যুদ্ধের ঘোষণার কারণেই এসব ঘটছে। ওই ঘোষণায় চাপ ও অস্থিতিশীলতা বেড়েছে।’

ভারতের নীতি নির্ধারকরা রুপির বেহাল অবস্থার জন্য অফশোর ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে আসছেন। তবে হুগো এরকেন বলেন,  বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা, তেলের একতরফা উচ্চমূল্য তুরস্ক, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকেও অস্থিতিশীল করে ফেলেছে।

ভারত তাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানির দুই-তৃতীয়াংশই আমদানি করে থাকে। তাই তেলের দাম বৃদ্ধি দেশটিকে ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। তাই তেলের দামের কারণেই রুপির দাম আরেক দফা কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রয়েছে আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি। সরকারি হিসাব মতে, ভারত গত মাসে ৪৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। আর দেশটির রফতানি আয় হয়েছে ২৮০০ কোটি মার্কিন ডলার।

গুরুস্বামী বলেন, ‘যদি এই বাণিজ্য অস্থিতিশীলতা ও বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি অব্যাহত থাকে তাহলে রুপির দাম কমতেই থাকবে। রুপির দুর্বলতার কারণে ডলারের চাহিদাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে লোকজন রুপি ব্রিকি করে দিয়ে ডলার বা অন্যকোনও বিদেশি মুদ্রা কেনার দিকে ঝুঁকবে।’ দুর্বল মুদ্রার কারণে বিদেশি বন্ডের বিক্রিও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। এতে রুপির ওপর চাপ আরও বাড়বে।

গুরুস্বামী বলেন, ডলারের শক্তিশালী অবস্থার কারণে অর্থ আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাচ্ছে। একই সঙ্গে লোকজন আমেরিকায় অর্থ রাখতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় মুদ্রার এমন পতন বিশ্ববাজারে ভারতীয় ক্রেতাদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।