ইন্দোনেশিয়া শুক্রবারের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প ও সুনামিতে রবিবার সকাল পর্যন্ত ৪২০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় দেড় শতাধিক আফটার শক অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গুরুতর আহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে।
ভূমিকম্প-সুনামির ধাক্কায় আহ্ত হয়েছে শত শত মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ৫৪০ জনের গুরুতর আহত হওয়ার তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, শত শত আহত মানুষকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। উপদ্রুত এলাকায় দেড় শতাধিক আফটার শকের কারণে হাসপাতাল ভবনের অভ্যন্তরে চিকিৎসা না দিয়ে তাদের খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিধ্বস্ত ভবনে চাপা পড়ে যারা আহত হয়েছে, হাসপাতাল ভবনের অভ্যন্তরে চিকিৎসা নিতে ভয় পাচ্ছে তারা।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৫ টার দিকে সুলাবেসি দ্বীপে ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর আগে অঞ্চলটিতে মাঝারি মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। দ্বিতীয় কম্পনের পর শুরু হয় সুনামির ভয়াবহতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজন চিৎকার করছে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু স্থাপনা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুনামির আঘাতে ভবন ধস ও নৌযান ভাসিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান জানান, পালুতে সুনামি আছড়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটার শক হয়। এরপরই সুনামি আছড়ে পড়ে। তিনি বলেন, সুনামিটি ছিল দেড় থেকে দুই মিটারের। তা শেষ হয়ে গেছে। তবে পরিস্থিতি এখনও বিশৃঙ্খল। মানুষজন রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে। ভবন ধসে পড়েছে এবং নৌযান সাগরে ভেসে গেছে।
ভূমিকম্পের পরপরই সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। পরে এক ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করা হয়। সতর্কতা প্রত্যাহারের পরই সুনামি আছড়ে পড়ে। এর তাণ্ডবে ভেঙে পড়ে উপদ্রুত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্ধ হয়ে যায় স্থানীয় বিমানবন্দর। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে প্রথমে জানিয়েছিল, কম্পনের মাত্রা ৭ দশমিক ৭। তবে পরে জানানো হয়, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন ধরা পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি জাপানেও জারি করা হয় সুনামি সতর্কতা।
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতেই ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান। ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট দেশটির লম্বক দ্বীপে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ৪৬০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৪ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের জেরে সুনামি আছড়ে পড়ে অন্তত ১৩টি দেশে। ওই সুনামিতে উপদ্রুত দেশগুলোতে দুই লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই মৃতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২০ হাজার। সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ।