খাশোগি নিখোঁজ রহস্য: সন্দেহভাজনের তালিকায় সৌদি যুবরাজের দেহরক্ষী!

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখোঁজের ঘটনায় ক্রমশ জোরালো হচ্ছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা থাকার আশঙ্কা। তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের মধ্যে অন্তত চারজনের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তার মধ্যে মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষী মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেবও রয়েছেন।

মোহাম্মদ বিন সালমানের ছবিতে দেহরক্ষী মুতরেবকে দেখা যাচ্ছে
জামাল খাশোগি গত ২ অক্টোবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে তুরস্কের ইস্তানবুল শহরের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর বের হননি। সৌদি আরব অবশ্য বলছে, খাশোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে এর প্রমাণ চাওয়া হলে তা সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদ। তুরস্কের দাবি, তাদের তদন্তকারীদের হাতে নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। ২ অক্টোবর তুরস্কে আসা ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার।

তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ওই ১৫ সদস্যবিশিষ্ট স্কোয়াডের মধ্যে একজনকে সৌদি যুবরাজের দেহরক্ষী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেব নামের ওই দেহরক্ষী একসময় লন্ডনস্থ সৌদি দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুর্কি কর্তৃপক্ষ তাকে এখন খুঁজছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজের মাদ্রিদ, প্যারিস ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে তোলা ছবিতে মুতরেবকে পাহারারত অবস্থায় দেখা গেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুতরেবসহ চার সন্দেহভাজনের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নিরাপত্তাজনিত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট স্কোয়াডের অন্তত ৯ জন সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিস, সেনাবাহিনী কিংবা অন্য সরকারি মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে। চেহারা শনাক্তকরণ সফটওয়্যার, সৌদি সেলফোন নম্বরের ডাটাবেজ, সৌদি সরকারের ফাঁস হওয়া নথি, প্রত্যক্ষদর্শী ও মিডিয়ার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

সৌদি যুবরাজের প্যারিস সফরের ছবিতে মুতরেব
শুরু থেকেই খাশোগিকে হত্যার একটি অডিও প্রমাণ হাতে থাকার দাবি করে আসছে তুরস্ক। ওই অডিও রেকর্ডিং পুরোপুরি শুনেছেন এমন এক তুর্কি সূত্র মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আইয়ের কাছে দাবি করেন, ২ অক্টোবর মাত্র সাত মিনিটে পুরো হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়েছে। ওই সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের ফরেনসিক প্রমাণ সংক্রান্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালাহ মোহাম্মদ আল তুবাইগিসহ ১৫ জনের একটি দল প্রাইভেট জেটে করে ওইদিন সকালে আঙ্কারা পৌঁছান। দূতাবাসের কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে খাশোগিকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় উপরে প্রচণ্ড চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিচতলায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, তাকে চেতনানাশক কিছু দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও আলামত দেখা যায়নি। তাকে হত্যা করতেই স্কোয়াডটি এসেছিল। স্টাডিরুমের টেবিলে ওপর শুইয়ে খাশোগিকে জীবিত অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করেন তুবাইগি। পুরো হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মিনিট। তুবাইগি যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন তখন তিনি ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন। এছাড়া এ সময় তিনি তার সহকর্মীদেরও গান শুনতে উৎসাহ দেন। ওই রেকর্ডে তুবাইগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘যখন আমি এ কাজ করি তখন গান শুনি। আপনাদেরও এটা করা উচিত।’