কঙ্গোর বেনিতে সেনা-বিদ্রোহী সহিংসতায় ইবোলা মোকাবিলা কার্যক্রম বন্ধ

আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর বেনি শহরে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত জোরালো হওয়াকে কেন্দ্র করে ভেস্তে গেছে ইবোলা ভাইরাস মোকাবিলাজনিত কার্যক্রম। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, একটি জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্রের খুব কাছে শেল হামলা হওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মীরা ওই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। নতুন করে আবার কবে থেকে এ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

ইবোলা মোকাবিলাজনিত কার্যক্রমের ছবি (ফাইল ফটো)
মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলা ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। ২০১৪-১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণে ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তখন বেশি আক্রান্ত হয়েছিল গিনি,সিয়েরা লিওন এবং লাইবেরিয়া। ২০১৪ সালে কঙ্গোতে ইবোলা সংক্রমণে ৪০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছরের জুলাই মাসে কঙ্গোতে নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ১৯৭৬ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়ার এর এই নিয়ে দশমবারের মতো কঙ্গোয় ইবোলা প্রাদুর্ভাবের ঘটনা ঘটলো। তবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী, কঙ্গোলিজ সেনা ও বিদ্রোহীদের পাল্টাপাল্টি শেল হামলা অব্যাহত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা তৎপরতা। বেনি শহরে জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্রের কয়েক মিটার দুরত্বে শেল হামলা হওয়ার পর সেখানকার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

শেলটি একটি বাড়িতে আঘাত করে। ওই বাড়িতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৬ জন চিকিৎসাকর্মী অবস্থান করছিলেন। তারা সিঁড়ির নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে ওই এলাকা ত্যাগ করেন তারা।

নতুন করে এ শেল হামলার জন্য উগান্ডার সশস্ত্র ইসলামপন্থী সংগঠন অ্যালিড ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এডিএফ)-কে দায়ী করেছে কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৯৯০ এর দশক থেকে এ সংগঠনটি সক্রিয় রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাল্টাপাল্টি হামলা চলার সময় শেলটি ওই বাড়িতে পড়েছে। এটি কারা নিক্ষেপ করেছে সে ব্যাপারে জানা যায়নি। মিলিশিয়া, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কিংবা কঙ্গোর সেনাবাহিনী-যে কেউই শেলটি নিক্ষেপ করে থাকতে পারে।

বানর এবং বাদুড়ের মতো বন্য প্রাণী থেকে প্রথম এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়। দেহ থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন ধরণের রসের (রক্ত, লালা) মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। ইবোলার উল্লেখযোগ্য কোনও চিকিৎসা নেই। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, পেশীতে ব্যথা, অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক রক্তক্ষরণ। ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঘটনায় এই ভাইরাস প্রাণঘাতী হতে পারে। কঙ্গোতে নতুন করে ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ২০০-রও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, কঙ্গোর ইতিহাসে এটি ইবোলাজনিত সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। গৃহযুদ্ধকবলিত কঙ্গোর ইবোলা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হামলা এবং সম্প্রদায়গুলোর পাল্টা প্রতিরোধমূলক পরিস্থিতিতে ইবোলার প্রাদুর্ভাব আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়ে আসছে তারা।