ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করলেন ইইউ নেতারা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবিত চুক্তি অনুমোদন করেছেন ইইউ নেতারা। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এক টুইট বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রবিবার (২৫ নভেম্বর) ব্রাসেলস সম্মেলনে চুক্তিটি পাস করতে ইইউ নেতারা এক ঘণ্টারও কম সময় নিয়েছেন।

_104479334_maytusk

শনিবার শেষ মুহূর্তে স্পেন জিব্রাল্টার বিষয়ে তাদের উত্থাপিত দাবি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরই ডোনাল্ড টাস্ক চুক্তিটি অনুমোদনের আভাস দিয়েছিলেন। ইইউ নেতাদের অনুমোদনের পর চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন দরকার পড়বে।  তবে সেখানে বিরোধী দল ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলেরই অনেক এমপি চুক্তিটির বিরোধিতার কথা জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য ও ইইউ’র মধ্যে ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর এই চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়। ২০১৬ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে বের হয়ে যাবে।

আগামী মাসের শুরুতেই ব্রেক্সিট চুক্তি বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সেখানে চুক্তিটি পাস হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ইতোমধ্যে লেবার পার্টি, লিব ডিমস, এসএনপি, ডিইউপি এমনকি প্রধানমন্ত্রীর থেরেসা মে’র কনজারভেটিভ পার্টিরও অনেক নেতা এই চুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর থেরেসা মে এই চুক্তিকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম চুক্তি অভিহিত করে জনগণকে তা সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বেক্সিট ইস্যুতে হওয়া গণভোটকে সম্মান জানানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।

ইইউ নেতারা দুটি প্রধান ব্রেক্সিট ডকুমেন্টের অনুমোদন দিয়েছে। এর একটি হলো ইইউ অপসারণ চুক্তি। ৫৮৫ পৃষ্ঠার এই নথিতে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯০০ কোটি পাউন্ডের ডিভোর্স বিল, নাগরিক অধিকার এবং বাণিজ্য সংলাপ বন্ধ হলে আইরিশ সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার জন্য গৃহীত উত্তর আয়ারল্যান্ডের ‘ব্যাকস্টপ’ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুমোদিত দ্বিতীয় নথিটি হলো রাজনৈতিক ঘোষণা সংক্রান্ত। এই নথিতে ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য ও ইইউ এর মধ্যে সম্পর্ক কেমন থাকবে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো এই নথির আওতায় রয়েছে।

চুক্তিটির বিষয়ে সবাই একমত হওয়ায় তা নিয়ে রবিবার কোনও আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটি হয়নি। সিদ্ধান্তে বিষয়টি নিশ্চিত করে এক খোলা চিঠিতে ইউরোপিয়ান কাউন্সিল বলেছে, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের সুশৃঙ্খল অপসারণের পথকে মসৃণ করবে। আর তারা ভবিষ্যতে দেশটির সঙ্গে ‘সম্ভাব্য ঘনিষ্ঠতম’ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।

এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লাউড জানকার বলেন, যুক্তরাজ্যের চলে ইইউ’র জন্য একটি ‘ট্র্যাজেডি’। তিনি আরও বলেন, বিচ্ছেদ কখনও মসৃন হয় না।

ইইউ’র বেশিরভাগ নেতা এই প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে চাইলেও লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রিবাউসকাতে বলেন, যদি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে তাহলে এই ফল ভিন্ন হতে পারে। এজন্য আরও বিস্তৃত আলোচনা করা বা আবারও গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে।

ইইউ সম্মেলনে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন হয়ে যাওয়ায় এখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে পার্লামেন্টে তা পাস করাতে হবে। এজন্য পার্লামেন্টের এমপিদের এই চুক্তি সমর্থনের জন্য রাজি করাতে হবে। তিনি এখন দেশে ফিরে এমপিদের রাজি করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে যাবেন। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই বিষয়টি পার্লামেন্টে উঠবে বলে তিনি বেশি সময়ও পাবেন না।

যদি এমপিরা চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে তাহলে বেশকিছু বিষয় ঘটতে পারে। এরমধ্যে একটি হলো কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। নইলে পুনরায় আলোচনা অথবা দেশে আগাম সাধারণ নির্বাচন দেওয়াও বিকল্প প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে।