ইদলিবের পথে পথে তুর্কি ও রুশ সেনা

গৃহযুদ্ধের সাম্প্রতিক পর্যায়ে সিরীয় বিদ্রোহীদের বেশিরভাগ দখলীকৃত অঞ্চলের ওপর আসাদ সরকারের পুনঃনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলেও ইদলিবের অবস্থা ভিন্ন। সেখানে এখনও আসাদবিরোধীদের দাপট শেষ হয়ে যায়নি। সবশেষ এই বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহরের পথে পথে শুক্রবার রুশ ও তুর্কি সেনাদের টহল দিতে দেখা গেছে। শুক্রবার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসুই আকর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন গত বছরের অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তির আওতায় এই টহল শুরু হয়েছে।

ইদলিবে তুর্কি সেনাদের টহল

 

আসাদ সরকারকে উৎখাতে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্মতি ও সংশ্লিষ্টতা সত্ত্বেও তাকে দুর্বল করতে সমর্থ হয়নি বিরোধীরা। আট বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের বর্তমান বাস্তবতায় বিদ্রোহীদের দখলকৃত বেশিরভাগ অঞ্চলে নিজেদের পুনঃনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে আসাদ সরকার। বিদ্রোহীদের সর্বশেষ বড় অবস্থান রয়ে গেছে শুধু ইদলিব প্রদেশেই। এক সময়ে আল কায়েদা সমর্থিত গ্রুপ হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) প্রদেশটি নিয়ন্ত্রণ করছে।

 

তুরস্কের আশঙ্কা, প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসতি ইদিলব থেকে বিদ্রোহী তাড়াতে সরকারি বাহিনী হামলা চালাতে পারে। তাতে সেখানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তুরস্ক ও ইউরোপে নতুন করে শরণার্থী ঢল শুরু হবে। সে কারণেই সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর হামলা থেকে ওই অঞ্চলকে রক্ষায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার মিত্রশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ টহলের চুক্তি স্বাক্ষর করে তুরস্ক। সোচিতে রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও ভ্লাদিমির পুতিনের ঐকমত্যে ইদলিবে বেসামরিক এলাকা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইদলিব সীমান্তে তুর্কি ও রুশ বাহিনীর যৌথ টহলের সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসুই আকর বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা জোরালো হয়েছে। আমরা এটাকে অস্ত্রবিরতি সংক্রান্ত যোগাযোগ ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের পথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি।

 

গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ার প্রায় ৩০ লাখ শরণার্থী এরইমধ্যে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। জনকীর্ণ ইদলিব প্রদেশে কোনও ধরণের হামলা হলে তুরস্কের সীমান্তে নতুন করে শরণার্থীদের চাপ পড়বে বলে মনে করে ইস্তানবুল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ এলাকায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য এই যৌথ টহল নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আর সেকারণেই এই টহল তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

চুক্তি অনুযায়ী, সিরিয়া সরকারের মিত্র দেশ রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইদলিবের প্রান্তে টহল দিতে পারবে। আর বেসামরিক এলাকায় কার্যক্রম চালাবে তুরস্কের সেনাবাহিনী। শুক্রবার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ইদলিব ও আফরিন এলাকার আকাশসীমা ব্যবহারে বিধিনিষেধ ছিলো তবে আজ থেকে তা উঠে যাবে। ইদলিবের যুদ্ধবিরতি ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে যৌথ টহল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী হুলুসুই আকর।

২০১১ সালে বাসার আল আসাদ বিরোধী থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় দেশটিতে। এই যুদ্ধে আসাদ সরকারের পাশে দাঁড়ায় রাশিয়া ও ইরান। বিদ্রোহী কয়েকটি গ্রুপকে সহায়তা দেয় তুরস্ক। সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ দূত স্ট্রাফান ডি মিস্তুরার ধারণা সিরিয়া যুদ্ধের প্রথম পাঁচ বছরে চার লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে মৃত্যুর সংখ্যার সাম্প্রতিক কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।