থেরেসাকে উৎখাতের পরিকল্পনা নিজ মন্ত্রিসভার সদস্যদের

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-কে উৎখাতে খোদ তার নিজ মন্ত্রিসভার সদস্যরা পরিকল্পনা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, থেরেসাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর পাশাপাশি আগামী বছর নেতৃত্ব নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তার জায়গায় ‘অন্তবর্তী নেতা’ নির্বাচনের কথাও ভাবছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তবে অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে দলের অভ্যন্তরে। দলের ব্রেক্সিটপন্থী এবং বিরোধীদের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন নেতাদের।

থেরেসা মেদলটির আইনপ্রণেতারা বিবিসি-কে বলেছেন, ইউরোপের সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনার দায়িত্বে থেরেসা আর থাকবেন না, এমন নিশ্চয়তা পেলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার চুক্তি অনুমোদন করতে পারেন তারা। মন্ত্রিসভার সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করছে, সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পরই বিবিসি-র কাছে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন তারা। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরে কোনও ধরনের অভ্যুত্থানচেষ্টার খবর নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

থেরেসা মে-র ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়া কিংবা সিনিয়র মন্ত্রীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ ভাগাভাগির খবরও অস্বীকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তবে বিবিসির রাজনৈতিক সম্পাদক লরা কুয়েনসবার্গ বলেছেন, ‘মারাত্মক টানাপড়েন’ চলছে।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দিলে নিজের ব্রেক্সিট চুক্তিতে দলীয় এমপিদের সমর্থন পেতে পারেন থেরেসা মে। কনজারভেটিভ পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই আভাস মিলেছে।

এদিকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে বিলম্বের জন্য আইনপ্রণেতাদের সমালোচনা করার এক সপ্তাহের মাথায় এ নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন থেরেসা মে। আগামী সপ্তাহে তার ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে পার্লামেন্টে তৃতীয় দফায় ভোটাভুটির কথা রয়েছে। তবে আইনপ্রণেতাদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, চুক্তির খসড়ায় যথেষ্ট সমর্থন পেলেই কেবল তিনি তা পার্লামেন্টে উত্থাপন করবেন। তার এই চিঠির পর কখন সেই প্রস্তাব পার্লামেন্টে উঠানো হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

এদিকে দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, থেরেসা-র ডি ফ্যাক্টো ডেপুটি ডেভিড লিদিংটনকে তার বিকল্প হিসেবে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। তিনি ব্রেক্সিট বিরোধী হিসেবে ভোট দিয়েছেন। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ব্রেক্সিটপন্থী পরিবেশ সম্পাদক মাইকেল গোভকে ঐকমত্যোর ভিত্তিতে বাছাই করা হয়েছে। তবে এক সিনিয়র আইনপ্রণেতা বিবিসি-কে বলেছেন, পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েও চুক্তি অনুমোদন করাতে পারবেন না থেরেসা। দুইবার বড় ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর চুক্তি অনুমোদন করাতে তাকে এখনও প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তার চুক্তির বিকল্প নিয়ে আগামী বুধবার পার্লামেন্টে বিতর্কের আয়োজন করতে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের একটি গ্রুপ।

থেরেসার চুক্তির অন্তত ছয়টি বিকল্প নিয়ে আগামী কয়েক দিনে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। এসব বিকল্পের মধ্যে রয়েছে: আর্টিকেল ৫০ বাতিল এবং ব্রেক্সিট বাতিল, আরেকটি গণভোট, প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির পাশাপাশি একটি শুল্কঃবিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং একক বাজারে প্রবেশাধিকার, কানাডা স্টাইলে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন।

এ সপ্তাহেই ইউরোপীয় নেতারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ২৯ মার্চের পরিবর্তে ১২ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়। আগামী সপ্তাহে থেরেসার চুক্তি অনুমোদন পেলে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা ২২ মে পর্যন্ত বাড়াতে রাজি আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর তা না হলে বা কোনও বিকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১২ এপ্রিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে যুক্তরাজ্য।