নিউ ইয়র্কের নির্বাচনে দুই প্রবাসী বাংলাদেশির চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আগামী ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী দুই তরুণ বাংলাদেশি-আমেরিকান। ফলে দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে তাদের মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে সেখানকার দুই শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাকে। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দৃশ্যত নিউইয়র্কের বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতাবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এই দুই বাংলাদেশি আমেরিকান।

nonameএই বাংলাদেশি আমেরিকানদের একজন  শানিয়াত চৌধুরী। ২৭ বছরের শানিয়াত নিউ ইয়র্কের একজন  রাজনৈতিক সংগঠক। তিনি মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে গ্রেগরি মিকস-কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে যাচ্ছেন।

একই রাজ্যের লং আইল্যান্ড সিটি থেকে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চাইছেন মেরি জোবাইদা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই প্রগতিশীল সদস্য রাজ্য আইনসভার ডেপুটি স্পিকার ক্যাথেরাইন নোলান-এর কাছ থেকে তার আসন  ছিনিয়ে নিতে চান।

শানিয়াত চৌধুরী এর আগের নির্বাচনগুলোতে কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কর্তেজ-এর জন্য কাজ করেছিলেন। সে সময়ে সিনিয়র কংগ্রেসম্যান জো ক্রাউলি-র বিরুদ্ধে জয় পান আলেকজান্দ্রিয়া। এখন শানিয়াত চৌধুরীর প্রত্যাশা তিনিও যেন প্রতিনিধি পরিষদের গ্রেগরি মিকস-কে হারিয়ে একই  রকমের বিজয় নিশ্চিত করতে চান। তবে ঝানু রাজনীতিক গ্রেগরি মিকস কুইন্সে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শানিয়াত বলেন, দেশের সবচেয়ে প্রগতিশীল আসনগুলোর মধ্যে একটি হওয়ার সুযোগ রয়েছে এ জেলার। কিন্তু বর্তমানে একজন  কর্পোরেটিস্ট-এর কারণে এই সুযোগ বিনষ্ট হচ্ছে,  যিনি দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়া বাংলাদেশি অভিবাসীর পুত্র শানিয়াত চৌধুরী। মার্কিন নৌবাহিনীতে কাজ করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ তরুণ একজন  রাগবি খেলোয়াড়। এখন একটি জ্যাজ ক্লাবে মদ পরিবেশনের কাজ কাজ করেন তিনি।

দলীয় মনোনয়ন লাভে শানিয়াত চৌধুরীকে গ্রেগরি মিকস-এর শক্ত  প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। গ্রেগরি মিকস-এর একটি শক্তিশালী ডোনার নেটওয়ার্ক রয়েছে। এছাড়া নিজের আফ্রিকান-আমেরিকান কমিউনিটির ভোটও রয়েছে তার ঝুড়িতে। তবে শানিয়াত চৌধুরীর প্রত্যাশা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কর্তেজ যেভাবে প্রচারণা চালিয়ে সিনিয়র কংগ্রেসম্যান জো ক্রাউলি-র বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন তিনিও সেভাবেই আসনটিতে প্রতিনিধি পরিষদের বর্তমান সদস্যকে সেভাবেই পরাস্ত করতে সক্ষম হবেন।

লং আইল্যান্ড সিটিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেরি জোবাইদা-র প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্য আইনসভার ডেপুটি স্পিকার ক্যাথেরাইন নোলান। ৩৫ বছর ধরে স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হয়ে আসছেন ক্যাথেরাইন। গত ১০ বছরে নিজ দলের কারও কাছ থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি তাকে।

নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতেই মেরি জোবাইদা বলেন, কোনও ভুল নয়, আমরা এখানকার স্থিতাবস্থাকে (দীর্ঘ সময় ধরে একজন  নির্বাচিত হওয়া) চ্যালেঞ্জ করছি। স্থানীয় ব্যালটে নির্বাচনের জন্য শুধু একটি নাম থাকা সত্যিকারের গণতন্ত্রের মতো নয়।

তিন সন্তানের জননী জোবাইদা নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একজন  স্নাতক। তিনি নগর স্বাস্থ্য পরিকল্পনার আউটরিচ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানেই শক্তিশালী রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বাংলাদেশি আমেরিকানরা। এক্ষেত্রে আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কর্তেজ কিংবা ইলহান ওমরের মতো প্রার্থীরা যেভাবে তাদের প্রগতিশীল এজেন্ডা দিয়ে সাফল্য পেয়েছেন তা অনেককেই উৎসাহিত করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে তাদের জন্য এখনও অনেক চড়াই-উৎরাই বাকি আছে। তবে দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী শানিয়াত চৌধুরী এবং মেরি জোবাইদা উভয়েই বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জোরালো সমর্থন পাচ্ছেন। যদিও শুধু এই সমর্থন তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। কেননা হিস্পানিক এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিপুল সংখ্যক ভোট রয়েছে। সেই ভোটও এই প্রার্থীদের পেতে হবে। নিজ নিজ আসনে বর্তমানে বিজয়ী প্রার্থীদের হটিয়ে আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন নিশ্চিতে জোরালো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে শক্তিশালী পুরনো নেতাদের। চালাতে হবে সৃজনশীল ও শক্তিশালী প্রচারণা।