মধ্যপ্রাচ্য সংকট: ইরানের প্রতি চীনের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন

২০১৫ সালে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইরানের পরমাণু সমঝোতার প্রতি পূর্ণাঙ্গ সমর্থন ঘোষণা করেছে চীন। বেইজিং মনে করছে,  সমঝোতার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমন করা সম্ভব। সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এই মন্তব্য করেছেন।

noname

ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে গত বছর তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার বর্ষপূর্তির দিনে চুক্তি থেকে আংশিক সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেয় তেহরান। এরপর ইরানের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে উগসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী রণতরী ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের হুমকি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ শুরুর অভিযোগ এনেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং সোমবার বেইজিংয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবে যেমন করে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে, তেমন করে এটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে উত্তেজনা প্রশমনের পাশাপাশি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এই সমঝোতার প্রতি চীন পূর্ণাঙ্গ প্রতিশ্রুতিশীল। সমঝোতা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে  অব্যাহত তৎপরতা চালিয়ে যাবে বেইজিং।

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা নিয়ে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ সম্প্রতি  ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সবশেষ প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন নিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, আইএইএ ১৫তম বারের মতো একথা নিশ্চিত করেছে যে, ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলছে।  তিনি আরও বলেন, এ প্রতিবেদন থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আইএইএ ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে পারছে। এটি চীনের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক।

২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে ৬ জাতিগোষ্ঠী চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভিয়েনায় নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্র (পি-ফাইভ) যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি (ওয়ান) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়। 

গত শুক্রবার আইএইএ’র মহাসচিব ইউকিয়া আমানো তার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছেন, ইরান ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার ভেতরে থেকেই নিজের পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করছে।