মুর্তজার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করছে সৌদি আরব!

সৌদি আরবে ১৩ বছর বয়সে আটক মুর্তজা কুরেইরিসকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে দেশটির সরকার। ২০২২ সালেই তাকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। শনিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা। তবে মুর্তজার বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি সৌদি সরকার।noname

আরবের দুর্নীতিপ্রবণ ও জনবিরোধী শাসকদের বিরুদ্ধে যখন বসন্তের ঢেউ খেলে গিয়েছিল, সে সময় সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল শিশু মুর্তজা কুরেইরিস। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় সাইকেল নিয়ে অহিংস প্রতিবাদে নেমেছিল সে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সম্প্রতি তাদের এক বিশেষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে সক্ষম হয়, সুদীর্ঘ নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। সবশেষে শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধিতার শাস্তি হিসেবে ওই শিশুর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিএনএন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সত্যতা যাচাই করেছে। লেখক-সাংবাদিক ইয়ান ফ্রেজার এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সৌদি তরুণ এমন ১০ বছর বয়সে গণতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদে নামার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড পেতে যাচ্ছে, এরপর তার মরদেহ সম্ভবত জনসম্মুখে ঝুলিয়ে রাখা হবে’।

তবে সর্বশেষ সৌদি কর্মকর্তা জানালেন, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে না মুর্তজাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে না।’ 

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর সারাবিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়ে সৌদি আরব। এছাড়া দেশটিতে মানবাধিকারকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার রেকর্ড রয়েছে সৌদি সরকারের। বুধবার অস্ট্রিয়ার সরকার জানায়, মুর্তজার মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে তারা ভিয়েনাতে সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত ধর্মীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মৃত্যুদণ্ড আদতে সরকারের শিয়াবিরোধী দমন অভিযানের অংশ। ২০১৫ সালে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এই শিয়াবিরোধী অভিযান জোরালো করেন, চলতে থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উৎখাত। জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা জানান, সৌদি সরকার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে রাজনৈতিক আন্দোলন দাবিয়ে রাখতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অথর্নীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী সার নোমিকস এক টুইট বার্তায় বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর সৌদি নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় ১৩ বছর বয়সেই তাকে আটক করা হয়। এখন তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চায় সৌদি আরব। কেউ কি এই নির্মমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে? 

তবে সৌদি আরব বরাবরই এই শিয়াবিরোধী অভিযানের ব্যাপারে অস্বীকার করে আসছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মুর্তজা পুলিশ ও ফার্মাসিকে লক্ষ করে ককটেল নিক্ষেপ করেছে, গুলি চালিয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে জার্মান রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা চালানোরও চেষ্টা করেছে সে।

তবে ২০১১ সালে মুর্তজা যখন সাইকেল নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিল, তখন তার বয়স ছিল ১০ বছর। ৩ বছর পরে ২০১৪ সালে তাকে যখন আটক করা হয়, তখন তার বয়স ১৩। তার মৃত্যুদণ্ডকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সৌদি রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের মিত্রশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলও টুইটার ব্যবহারকারীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বুদ্ধিজীবীসহ বহু মানুষ এই প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন। মুর্তজার মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত ইসলামি বিধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, সেই প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ।