ইরানের ‘পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন’ নিয়ে ইইউ-এর নরম সুর!

ইরান ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি যতোটুকু লঙ্ঘন করেছে তা ‘উল্লেখযোগ্য কিছু নয়’ বলে মনে করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং এর বিপরীতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ইইউ-এর ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এ মাসে চুক্তির বাধ্যবাধকতা অতিক্রম করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দেয় তেহরান। ইইউ-এর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগারিনি বলেছেন, যা ঘটেছে তা সংশোধনযোগ্য।

noname২০১৫ সালের জুনে ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বছরের নভেম্বর থেকে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে ইরান। ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে এ বছরের মে মাসে চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয় তেহরান। সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ৭ জুলাই সেই সময়সীমা শেষে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দেয় ইরান। ২০১৫ সালের চুক্তিতে এই মাত্রা ৩.৬৭ শতাংশে সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি ছিল তেহরানের।

সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর পাশাপাশি চুক্তি বহাল রাখার বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানা যায়। বৈঠক শেষে মোগারিনি বলেন,  চুক্তি লঙ্ঘনের বিপরীতে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই তাদের। তবে চুক্তি বহির্ভূত পদক্ষেপ থেকে সরে এসে পুরোপুরিভাবে চুক্তি মেনে চলতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক এ প্রধান।

বৈঠকে অংশ নিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছিলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তিটি এখনও মরে যায়নি। এ চুক্তি বাঁচানোর জন্য এখনও হাতে সময় আছে। ফেদেরিকা মোগারিনি বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরকারী ইউরোপের দেশগুলোর কেউই ইরানের লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না, যে কারণে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে না।

ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। একই উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যে বিমানবাহী রণতরী, বি-৫২ বোমারু বিমান ও এফ-২২ জঙ্গিবিমান মোতায়েন করে তারা। সবশেষ গত ২০ জুন ভোরে মার্কিন সেনাবাহিনী ইরানের আকাশসীমায় একটি ড্রোন পাঠালে ইরান তা গুলি করে ভূপাতিত করে। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইরানকে নতুন করে আলোচনায় বসতে বাধ্য করার জন্য দেশটির ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে ইরান বলেছে, দেশটি তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একবার পাশ্চাত্যের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। ফলে এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার আলোচনায় বসবে না তেহরান।