হংকং-এর রাজপথে ফের বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও পুলিশ

স্বায়ত্তশাসন, গণতন্ত্র ও আটককৃতদের মুক্তি দাবিতে শনিবারও হংকং-এর রাজপথে নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। চীনের অব্যাহত হুঁশিয়ারি ও গ্রেফতারের হুমকি নিয়েই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অঞ্চলটির মংকক শহরে জড়ো হলে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। অন্যদিকে চীন সমর্থিতরাও এদিন রাজপথে পাল্টা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের হাতেও ছিল বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড।noname
বিবিসি জানিয়েছে, বিরোধীরা রবিবার আরও বড় ধরনের বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে। সোমবার শহরজুড়ে অবরোধ পালন করবে তারা।

শনিবারের বিক্ষোভ চলাকালে আবারও হংকং-এর চীন সমর্থিত নেতা ক্যারি ল্যামের পদত্যাগ দাবি করে ‘উন্নত গণতন্ত্রের’ আওয়াজ তোলে বিক্ষোভকারীরা।

এক সময়কার ব্রিটিশ কলোনি হংকং এখন চীনের অংশ। ‘এক দেশ, দুই নীতি’র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে ভিন্ন। গত ৯ জুন থেকে সেখানে কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, ওই বিল অনুমোদন করা হলে ভিন্নমতাবলম্বীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে এক পর্যায়ে ওই বিলকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা দেন হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। তবে এতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সেখানকার নাগরিকরা।noname

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, শনিবারের বিক্ষোভে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো কাপড় পরিহিত ছিল আন্দোলনকারীরা। বহন করছিল ছাতা ও কমলা রঙের হেলমেট। এ সময় ‘পুলিশ সীমালঙ্ঘন করেছে’ লেখা সম্বলিত ব্যানার বহন করে আন্দোলনকারীরা। গত দুই মাস আন্দোলন চলাকালে আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলো তারা।

১৭ বছর বয়সী জ্যাকুলিন চ্যান বলেন, ‘আমরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে লড়ছি। ক্লান্তিকর হলেও এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা হংকং-এর মানুষ। আমরা এখানে জন্মেছি, এখানে বসবাস করি। আমরা অবশ্যই বেরিয়ে আসবো এবং স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করবো।’

বিক্ষোভের সময় প্রধান সড়কের দুই পাশের দোকানগুলো বন্ধ ছিল। রাস্তায় জড়ো হওয়া উৎসুক মানুষেরও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পথচারীদের অনেকে তাদের জুস ও বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করে। সংঘর্ষের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এর আগে পুলিশের টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচতে বিক্ষোভকারীদের মাঝে প্রতিরক্ষামূলক মুখোশ বিতরণ করে আন্দোলনকারী।

বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে পুলিশ জানিয়েছে, আন্দোলনকারীরা  ‘শৃঙ্খলা নষ্ট' করলে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। এদিকে হংকং ও চীনা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, যে কোনও ‘অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি' মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে।

হংকংয়ের অপরাধীদের চীনের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে বিচারের সুযোগ রেখে অঞ্চলটির পার্লামেন্টে তোলা একটি বিলের বিরুদ্ধে গত মার্চে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর থেকে বিলটি বাতিল, অঞ্চলটির চীন সমর্থিত প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগ, স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে হংকং-এর বাসিন্দারা।