ট্রাম্পের বিদেশি সহায়তা হ্রাসের প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও

পূর্ববর্তী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শত শত কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি সহায়তা হ্রাসের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। চলতি সপ্তাহে এই ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সহায়তা খাত সংকোচনের তালিকায় থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা-ইউএসএআইডি’র বাজেটও। এর ফলে বাংলাদেশের ওপরও সামান্য প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।noname

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই শিবির থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের এই সংকোচন নীতির বিরোধিতা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও রবিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, সাহায্য কমানোর মাধ্যমে এই পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া হবে। আইন প্রণেতাদের সঙ্গে এই ইস্যুতে কথা বলার আগ্রহের ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন দেশকে শত শত কোটি ডলার দিয়ে থাকি, যারা আমাদের পছন্দই করে না। এসব সাহায্য বিপুল পরিমাণে কমিয়ে দেব আমরা।’

পাকিস্তান ও ফিলিস্তিনিদের দেওয়া সহায়তার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমানোর পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য ওই দেশগুলোকে ঘিরে হলেও তিনি দীর্ঘ দিন থেকেই বলে আসছেন বেশ কিছু বিদেশি সহায়তা কর্মসূচির অর্থ অপচয় হচ্ছে অথবা অদক্ষতার সঙ্গে ব্যয় হচ্ছে।

কোন কোন বিদেশি সহায়তা কর্মসূচির অর্থ কমানো হবে সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও দেয়নি হোয়াইট হাউস। তবে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনটি কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেছেন। এসব কর্মসূচি হলো বাংলাদেশের শস্য বৈচিত্র্য উন্নত করা, মধ্য এশিয়ায় সোলার প্যানেল ক্রয় এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় সীমান্ত সুরক্ষা।

বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সাহায্য কমানোর সম্ভাব্য ঘোষণা সম্পর্কে তারা সচেতন আছেন। কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিতে ‘অর্থ সাহায্য কমানো বা বন্ধ করা হবে’ সে সম্পর্কে এখনও তাদের কিছু জানানো হয়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সামান্য কিছু প্রভাবের আশঙ্কা করছি।’

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী কংগ্রেসকে সর্বোচ্চ ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি সাহায্য কমানোর কথা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ইউএসএআইডি’র ২৩০ কোটি ও পররাষ্ট্র দফতরের ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের সাহায্য কমানোর কথা রয়েছে।

এসব অর্থ এরইমধ্যে চলতি বাজেটে বণ্টন করে দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। তবে এসব অর্থ এখনও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। চলতি অর্থবছর শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। আর এই সময়ের মধ্যে কংগ্রেস এসব অর্থ বরাদ্দ না দিলে তা খরচ করা যাবে না, আর তা মার্কিন রাজকোষে ফেরত যাবে।

কয়েকজন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্ত বিশ্বের বেশ কিছু দরিদ্রতম ও অরক্ষিত মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি রবিবার ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন এই পদক্ষেপ অবৈধ। তিনি বলেন, আমরা জোর দিয়ে বলছি প্রশাসন বৈদেশিক সাহায্য তহবিল বণ্টন অনুযায়ী ব্যয় করবে আর আইন অনুসরণ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে জিএও’র (গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অফিস) সঙ্গে কাজ করবে।

দুই প্রখ্যাত রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও রিপ্রেজেন্টেটিভ হল রজারসও সাহায্য কমানোর বিরোধিতা করেছেন। প্রেসিডেন্টকে লেখা এক চিঠিতে তারা ইউএসএআইডি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সাহায্য কমানো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।