ক্ষমা চাইলেন জাকির নায়েক

মালয়েশিয়ায় পুলিশি তদন্ত ও বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে আইনি নিষেধাজ্ঞার মুখে নিজের বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন বিতর্কিত ইসলামি বক্তা জাকির নায়েক। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আঘাত দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না। এটা ইসলাম পরিপন্থী। এই ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।’

Dr_Zakir_Naikমালয়েশিয়ায় ধর্ম ও জাতিগত ইস্যুকে স্পর্শকাতর বিবেচনা করা হয়। দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষ মুসলমান আর বাকিরা চীন ও ভারতের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এদের বেশিরভাগই সনাতন ধর্মাবলম্বী। সম্প্রতি জাকির মন্তব্য করেছেন, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের চেয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা সংখ্যালঘু হিন্দুরা শতগুণ বেশি অধিকার ভোগ করছে। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী হিন্দুরা মাহাথিরের নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক। এই মন্তব্যের জেরে জাকির নায়েককে মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেওয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। এ ঘটনায় পুলিশি তদন্ত চলছে।

জাকির নায়েক বলেন, ‘যদিও আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করেছি, তারপরও যারা দুঃখ পেয়েছেন তাদের সবার কাছে আমি এই ভুল বোঝাবুঝির জন্য ক্ষমা চাইছি। আমি চাই না আমাকে নিয়ে কেউ খারাপ ধারণা পোষণ করুক। ’

ভারতীয় এই বিতর্কিত ইসলামি বক্তা বলেন, তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি ছড়ানোর কাজ করেন কিন্তু অনেকে তার এই অভিযানে বাধা তৈরি করে। তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন বিগত কয়েকদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসলে আমার বিরোধীরা পুরো বক্তব্য থেকে নির্দিষ্ট কিছু বাক্যকে উপস্থাপন করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’ এজন্য অমুসলিমরা তাকে বর্ণবাদী মনে করায় দুঃখ পেয়েছেন তিনি।

জাকির নায়েক বলেন, আমি উদ্বিগ্ন কারণ অনেকেই এখন আমার পুরো বক্তব্য না শুনে বর্ণবাদী বলতে শুরু করেছে। এতে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং মানুষকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বর্ণবাদ একটি পাপ এবং আমি এর বিরুদ্ধে থাকি। ইসলামি বক্তা হিসেবে আমি সবসময়ই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।’

মালয়েশীয়দের প্রতি বিশেষ করে অমুসলিমদের তার পুরো বক্তব্য শোনার আহ্বান জানান জাকির নায়েক। তিনি বলেন, ‘ইউটিউব, পিস টিভি এবং পিস টিভি মোবাইল অ্যাপে তার বক্তব্য শোনা যাবে। সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জাকির নায়েক বলেন, আমার প্রতি হাজার হাজার মানুষের সমর্থন দেখে আমি আপ্লুত। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিক।’

ভারতের আদালতে অর্থপাচার ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে জিহাদি কার্যক্রম উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে জাকিরের বিরুদ্ধে। দিল্লির পক্ষ থেকে তাকে ফেরত পাঠানোর আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হলে ২০১৮ সালে মাহাথির এ ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এ বছর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহেও মাহাথির বলেছিলেন, ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জাকির নায়েককে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে না। তবে জুলাইয়ে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলাপকালে ৯৪ বছর বয়সী মাহাথির বলেছেন, ‘আমাদের দেশ মালয়েশিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের ও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ আছে। আমরা এমন কাউকে চাই না যাদের বর্ণগত সম্পর্ক ও অন্য ধর্ম সম্পর্কে কট্টর চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে জাকির নায়েককে আবার অন্য কোথাও পাঠানো কঠিন। কারণ, অনেক দেশই তাকে রাখতে চায় না।’