অ্যামাজনের আগুন ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট

ফরাসি প্রেসিডেন্ট অ্যামাজনের আগুনকে ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ আখ্যা দিলেও একে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে দাবি করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো। রেকর্ড সংখ্যক আগুনের ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বন রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানালেও বিদেশি শক্তিকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।Capture

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (আইএনপিই) বলছে,  এ বছর এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি আগুনের ঘটনা অ্যামাজন জঙ্গলে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। তাদের হিসাব মতে,  দাবানলে প্রতি মিনিটে অ্যামাজনের প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা পুড়ে যাচ্ছে।  যা একটি ফুটবল মাঠের প্রায় দ্বিগুণ আয়তনের সমান। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা,  এ অবস্থা চলতে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী লড়াইয়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎপত্তি অ্যামাজনে। গবেষকদের মতে, এই বন প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। এ কারণে অ্যামাজনকে বলা হয়ে থাকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হারকে ধীর করতে অ্যামাজনের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। 

অ্যামাজনে রেকর্ড সংখ্যক আগুনের ঘটনা একটি ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ উল্লেখ করে এটা সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস অ্যামাজনে আগুনের ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।  তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ফেসবুক লাইভে বলছেন, ‘এই দেশগুলো এখানে অর্থ পাঠায়, তারা এখানে দাতব্যের কাজের বাইরে অর্থ পাঠাতে পারে না। তারা এখানে আমাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের লক্ষ্যে এটি পাঠাচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার তিনি আরও বলেন, ব্রাজিলের একার পক্ষে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে সামর্থ্যের অভাব রয়েছে। ইউরোপের থেকে অ্যামাজন বড়। এই বিশাল এলাকায় অপরাধীদের দেওয়া আগুন কীভাবে আপনি মোকাবিলা করবেন? আমাদের এই সামর্থ্য বা পুঁজি নাই।

উত্তর অ্যামাজনের দেশ কলম্বিয়া বৃহস্পতিবার এ অঞ্চলের আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কলম্বিয়া কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে কলম্বিয়ার ভূখণ্ডের দিকে ধেয়ে আসা এই আগুনের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এই সাধারণ ঘটনায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহাযোগিতায় আগ্রহী আমরা।’

চলতি মাসের গোড়ার দিকে বলসোনারোর অধীনে বাছাই করা প্রকল্পগুলো পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কার পর ব্রাজিলের বন উজাড়রোধে প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন স্থগিত করেছে নরওয়ে ও জার্মানি। জার্মানির অর্থায়ন হারানোর ব্যাপারে বলসোনারোকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওটার (জার্মানির অর্থায়ন) প্রয়োজন হবে না ব্রাজিলের।’

পরিবেশবাদী সংগঠন ও গবেষকরা বলছেন, ব্রাজিলের রেইনফরেস্টে সৃষ্ট দাবানলের কারণ পশু পালক ও কাঠুরেরা। জমি ব্যবহার করতে তারা বনাঞ্চল পরিষ্কার করতে এসব দাবানল তৈরি করছে। আর এতে সমর্থন দিচ্ছেন দেশটির বাণিজ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট।