‘অ্যামাজনের আগুন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’

অ্যামাজনের আগুন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্যারিসের মেয়র অ্যানি হিদালগো। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অল্প সংখ্যক আন্তর্জাতিক রাজনীতিক এবং কর্পোরেট নির্বাহীদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে অ্যামাজন পুড়ছে।noname
গত ১৫ আগস্ট থেকে জ্বলছে ‘দুনিয়ার ফুসফুস’ খ্যাত ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গল। ইতোমধ্যেই পুড়ে গেছে সেখানকার সাত হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। অথ্চ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎপত্তি এই জঙ্গলে। আর এখন সেখানে মিনিটে পুড়ছে ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন তখন ট্রাম্প-ভক্ত হিসেবে পরিচিত ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো-র বিস্ফোরক মন্তব্যে হতবাক সমগ্র বিশ্ব। তিনি বলেছেন, আমাজনের আগুন ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ফলে এটি নিয়ে কারও নাক গলানো তিনি সহ্য করবেন না। তার এমন মন্তব্য এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে জোরালো উদ্যোগ না নেওয়ার জেরে হুমকিতে পড়েছে ইউরোপের সঙ্গে ব্রাজিল তথা দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তি। এমন পরিস্থিতিতে এ আগুন থামাতে একটি জরুরি আন্তর্জাতিক বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানান অ্যানি হিদালগো। একইসঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অ্যানি হিদালগো বলেন, আমাদের গ্রহের ফুসফুস পুড়ছে। অ্যামাজন জঙ্গল মানবতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। অল্প সংখ্যক আন্তর্জাতিক রাজনীতিক এবং কর্পোরেট নির্বাহীদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে এটি পুড়ছে। এই তথাকথিত নেতাদের লোভ দুনিয়াজুড়ে জলবায়ু সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করবে; যার প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্ব মানবতার ওপর। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে তারা (দায়ী ব্যক্তিরা) খুব সামান্যই উপকৃত হবে; অথচ এটি আমাদের দ্রুত উত্তপ্ত হতে থাকা পৃথিবীর ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যেই এটি অ্যামাজন অববাহিকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি এটি বিশ্বের বিভিন্ন নগরীর প্রবীণ, দুর্বল এবং কনিষ্ঠ নাগরিকদের হুমকিতে ফেলে দিয়েছে, যারা আসন্ন বছরগুলোতে জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, অ্যামাজনের আগুন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এদিকে অ্যামাজানের আগুন নেভাতে ব্রাজিল আরও উদ্যোগী না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকা ব্লকের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তি আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড। ইইউ-এর সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার এ চুক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি। এতে দক্ষিণ আমেরিকা ব্লকে ব্রাজিল ছাড়া বাকী দেশগুলো হচ্ছে আর্জেন্টিনা, প্যরাগুয়ে এবং উরুগুয়ে। দীর্ঘ ২০ বছরের আলোচনায় এ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর চুক্তিটি এখনো ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে অ্যামাজনের আগুন নেভাতে ব্রাজিলের ভূমিকায় হতাশা নিয়ে চুক্তিটিতে অনুমোদন না দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ড। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য জার্মানিও অ্যামাজনের আগুন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, এ আগুন শুধু ব্রাজিল ও আক্রান্ত দেশগুলোর জন্যই নয়; বরং পুরো দুনিয়ার জন্য হুমকি।

আগুন নেভাতে ব্রাজিল সরকারের জোরালো তৎপরতা না থাকার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশটির দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশ অধিকারকর্মীরা। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থী সরকার কথিত উন্নয়নের নামে দৃশ্যত বন উজাড়ে উৎসাহ দিচ্ছে। আর তার ফলশ্রুতিতেই পুড়ছে দুনিয়ার ফুসফুস খ্যাত অ্যামাজন। ইতোপূর্বে অ্যামাজনের সুরক্ষাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন ট্রাম্পভক্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎপত্তি অ্যামাজনে। গবেষকদের মতে এই বন প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। সে কারণে একে ডাকা হয়ে থাকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হারকে ধীর করতে অ্যামাজনের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বিশ্বের দীর্ঘতম এ জঙ্গলটি আয়তনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক। পরিবেশবাদীরা বলছেন, অ্যামাজনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার সরকারি নীতির কারণেই আগুন লাগানোর মহোৎসব শুরু হয়েছে। সূত্র: সিএনএন, আল জাজিরা।