অ্যামাজন ধ্বংসের মাধ্যমে ব্রাজিল সরকার আত্মঘাতী পথ বেছে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন শীর্ষ বিজ্ঞানী। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক কার্লোস নোবরে মনে করছেন, এই পথ থেকে ব্রাজিল সরকারকে সরানোর একমাত্র উপায় আন্তর্জাতিক চাপ। তিনি দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো সরকারের আমলে বন ধ্বংসের গতি তীব্র হয়েছে। পরিবেশ সংস্থাকে দুর্বল করে এবং খনিওয়ালা, কৃষক ও কাঠুরেদের সমর্থন দিয়ে বলসোনারোর সরকার বনাঞ্চল ধ্বংসে উৎসাহ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিজ্ঞানী কার্লোস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
রেকর্ড গতিতে প্রতিদিন পুড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত অ্যামাজন জঙ্গল। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (আইএনপিই) বলছে, এ বছর জুন পর্যন্ত ব্রাজিলে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আগুনের ঘটনা অ্যামাজন জঙ্গলে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮৮ শতাংশ বেশি। পরিবেশবাদীরা বলছেন, অ্যামাজনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার সরকারি নীতির কারণেই আগুন লাগানোর মহোৎসব শুরু হয়েছে।
সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক কার্লোস নোবরে বলেন, অরণ্য বিনাশ জোরালো হয়ে স্বাভাবিক এই আর্দ্র বনাঞ্চলকে শুষ্ক তৃণভূমিতে পরিণত হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর পরিণাম জলবায়ু, বণ্যপ্রাণী ও বনজীবীদের জন্য ভয়ঙ্কর হবে বলে সতর্ক করেন তিনি। এই বিজ্ঞানী বলেন, এই বছর ২০-৩০ শতাংশ বাড়ার পথে রয়েছে অরণ্য বিনাশ। গত দশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তা দশ হাজার বর্গকিলোমিটার ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই প্রবণতা গত কয়েক বছর ধরে খারাপ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বলসোনারোর অধীনে এতে গতি এসেছে। পরিবেশ সংস্থাকে দুর্বল করে এবং খনিওয়ালা, কৃষক ও কাঠুরেদের সমর্থন দিয়ে বলসোনারোর সরকার বনাঞ্চল ধ্বংসে উৎসাহিত করছে বলে জানান তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলের এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘পরিস্থিতি খুব খারাপ। এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে। এসব আগুনের অনেকাংশেরই কারণ সাংস্কৃতিক চাপ, যা মন্ত্রীরা দিচ্ছে। তারা অরণ্য বিনাশে জোর দিচ্ছে কারণ তা অর্থনীতির জন্য ভালো। এতে যারা অবৈধভাবে বন ধ্বংস করে তারা শক্তিশালী হচ্ছে।’
জনমত জরিপ অনুযায়ী ব্রাজিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী অ্যামাজনের সুরক্ষা চান। কিন্তু সরকার ব্যবসায়িক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পরিবেশগত কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া একটি মেগা হাইড্রো প্রকল্প চলতি সপ্তাহে আবারও শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। এছাড়া তার ছেলে কংগ্রেসে একটি বিল এনেছেন যাতে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে আদিবাসী এলাকা ও প্রকৃতি সংরক্ষণকারী অঞ্চলের সুরক্ষা।
বিজ্ঞানী নোবরে বলেন, ‘বিপজ্জনক ক্ষতি থেকে বন রক্ষার একটি উপায় হতে পারে বহির্বিশ্বের প্রতিবাদ ও ভোক্তাদের নেওয়া ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ব্রাজিলের বাসিন্দাদের চেয়ে আন্তর্জাতিক চাপের ওপরে বেশি মনোযোগ দেবেন ব্রাজিলের রাজনীতিবিদরা। আমি মনে করি এই কৌশলগত পথ বদলাতে আন্তর্জাতিক চাপের প্রয়োজন। ইউরোপীয় ভোক্তারা ব্রাজিলের পণ্য কিনবে কি না তা নিয়ে ব্রাজিলের কৃষিখাত খুবই উদ্বিগ্ন। অ্যামাজনের আত্মহত্যা থেকে ব্রাজিল সরকারকে ঠেকানোর এটাই চূড়ান্ত উপায় হতে পারে।’ না হলে এটি ব্রাজিল এবং জলবায়ুর জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।