কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের দাবি মনগড়া: ভারত

কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘে পাকিস্তানের দাবিকে ‘মনগড়া গল্প’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ভারত। বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে পাকিস্তানের সমালোচনার মুখে ইসলামাবাদের দাবিকে বানোয়াট হিসেবে আখ্যায়িত করে দিল্লি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।1568128566-0752

বৈঠকে কাশ্মিরে ব্যাপক ধরপাকড়, অঞ্চলটির নেতাদের গ্রেফতার ও তীব্র বিধিনিষেধ আরোপের ঘটনায় তদন্তের দাবি জানায় পাকিস্তান। তবে ইসলামাবাদের এমন বক্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ ও ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যায়িত করেছে দিল্লি।

মানবাধিকার কাউন্সিলে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক বিজয় ঠাকুর সিংহ দাবি করেন, কাশ্মির ইস্যু একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে কথা বলার কোনও অধিকার পাকিস্তানের নেই।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। লাদাখ ও কাশ্মিরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে বিল পাস হয়। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। জারি করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানকার শত শত নেতাকর্মীকে। সেখানে উন্নয়নের জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এটা দেশটির ‘সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়’ ভারতের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও পাকিস্তান বলছে, সেখানে কাশ্মিরিদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দিল্লির ওই পদক্ষেপের পর এর প্রতিবাদে জাতিসংঘে বৈঠকের আবেদন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি চিঠি দেন নিরাপত্তা পরিষদে। পরে চীন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য আহ্বান জানালে তা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি অস্বীকৃতি জানায় পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। পরে তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে কাশ্মিরিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানায়।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভবিষ্যতে সেখানে ‘গণহত্যা’র আশঙ্কার কথা জানান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। ইসলামাবাদের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দেয় ভারত। জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক বিজয় ঠাকুর সিংহ ওই দাবি ‘মিথ্যা’ ও ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের সিদ্ধান্তে (কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল) বুঝতে পেরেছে যে, তাদের সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অব্যাহত পৃষ্ঠপোষকতায় বাধা সৃষ্টি করে তাদের পায়ের তলার মাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

বিজয় ঠাকুর আরও বলেন, ‘বৈষম্য ঘোচাতে (জম্মু ও কাশ্মির) এটি একটি সংসদীয় সিদ্ধান্ত।’ এ সময় পাকিস্তানের নাম না করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব জানে এই মনগড়া আখ্যান তৈরি করছে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল, যেখানে জঙ্গি নেতারা বছরের পর বছর ধরে আশ্রয় পায়। এমন এক দেশ যারা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করে কূটনীতির অংশ হিসেবে।’

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সমালোচনা বন্ধ করতে সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে সেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলো শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে।