গোয়েন্দা কমিটির প্রধানকে গ্রেফতারের দাবি ট্রাম্পের!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির প্রধান অ্যাডাম স্কিফ-কে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাম্প। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিজের ফোনালাপ ফাঁসের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান।
টুইটারে ট্রাম্প বলেন, "প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য অ্যাডাম স্কিফ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার ফোনালাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি নিয়ে ভুয়া ও ভয়ঙ্কর বক্তব্য দিয়েছেন। মার্কিন কংগ্রেসে এবং আমেরিকান জনগণের সামনে তিনি উচ্চকণ্ঠে এটি পাঠ করেছেন। ওই ফোনকলে আমি যা বলেছিলাম তার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্কই নেই। রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য গ্রেফতার?" ট্রাম্পের এ টুইটের ব্যপারে অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেননি ডেমোক্র্যাট নেতা এবং প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির প্রধান অ্যাডাম স্কিফ। তবে এর আগে এ সপ্তাহেই ট্রাম্পের ওই ফোন কল ফাঁস করা গোয়েন্দা কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে ওই ফোনালাপ ফাঁসকারী সিআইএ কর্মকর্তাকেও দৃশ্যত হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এমন হুমকি আরও বিপাকে ফেলেছে তাকে। কেননা, ওই ঘটনার পর এখনও অবিলম্বে ট্রাম্পের অভিশংসন চাইছেন বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা। ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ওই ফোনকলের অনুলিপিও গোপন করতে চেয়েছিল হোয়াইট হাউস। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। হোয়াইট হাউসের ফোনকলের প্রতিলিপিতে দেখা গেছে, ট্রাম্প গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জো বাইডেন ও তার ছেলের দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তের জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। ওই ফোনালাপের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি সামনে আসে।

এ ঘটনায় রবিবার ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী কে সেটা জানার অধিকার তার রয়েছে। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, আমারও অন্য সব আমেরিকানের মতো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ব্যক্তিকে দেখার অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে এই অভিযোগকারী একজন বিদেশি নেতার সঙ্গে আমার যথাযথ কথোপকথনকে পুরোপুরি অসত্য ও প্রতারণামূলকভাবে তুলে ধরেছেন।’ এদিকে ওই ফোনালাপ ফাঁসকারী সিআইএ কর্মকর্তার আইনজীবীদের অভিযোগ, ট্রাম্পের হুমকিতে তাদের মক্কেল বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় এ ধরনের সম্ভাব্য স্বাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শীকে হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাকে তদন্তকাজের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখার সুযোগ রয়েছে। অথচ ট্রাম্প সরাসরি তার অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তাকে দেখতে চেয়েছেন। মূলত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের জেরে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিষয়ে তদন্ত শুরুর পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, এটা খুবই সহজ বিষয় যে, তারা আমাকে থামানোর চেষ্টা করছে। কেননা, আমি আপনাদের জন্য লড়াই করছি এবং তাদেরকে আমি এটা  কখনোই হতে দেবো না। বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে যেতে চায়। তারা আপনাদের বন্দুক কেড়ে নিতে চায়। তারা আপনাদের স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে চায়। তারা আপনাদের গণরায় কেড়ে নিতে চায়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ট্রাম্পের কথোপকথনের অনুলিপি নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে হোয়াইট হাউস। রাশিয়াও দাবি তুলেছে, মস্কোর অনুমতি ছাড়া পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ ফাঁস করতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন এবং সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ট্রাম্পের অনেক স্পর্শকাতর বিষয়ে কথোপকথন রয়েছে। ইউক্রেনের নেতার সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় এখন বিষয়টি নিয়ে আগের চেয়ে আরও সজাগ রয়েছে হোয়াইট হাউস। এ সংক্রান্ত নথিগুলো রাখা হয়েছে অতিমাত্রায় সুরক্ষিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কে। ফলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারও এটি দেখার সুযোগ থাকবে না। সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেশটির রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ হয়েছিল।

ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত না করলে ইউক্রেনে সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। জো বাইডেন হচ্ছেন ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তার বিরুদ্ধে বিদেশি সরকারকে তদন্তের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ২৪ সেপ্টেম্বর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিনিধি পরিষদের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দোষ প্রমাণিত হলে অভিশংসনের খড়গ ঝুলে রয়েছে ট্রাম্পের ওপর। তবে অভিশংসন প্রক্রিয়াকে ‘প্রতারণা’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে জো বাইডেনের বিষয়ে আলোচনার কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্পের দাবি, সামরিক সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে তিনি ইউরোপের কাছ থেকে সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন। তবে ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন,  ট্রাম্প যা করেছেন তা বেআইনি। এটি তার সাংবিধানিক দায়িত্বের লঙ্ঘন। এর জন্য তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জো বাইডেন অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।