বিক্ষোভের জেরে রাজধানী থেকে সরকারি কার্যক্রম সরিয়ে নিয়েছে ইকুয়েডর

তেলের ভর্তুকি বাতিলের পর ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সরকারি কার্যক্রম সাময়িকভাবে রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো।  এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেছেন সাময়িকভাবে সরকারি কার্যক্রম রাজধানী কুইটোর পরিবর্তে বন্দরনগরী গুয়াকুইল থেকে পরিচালিত হবে।  সোমবার সন্ধ্যার ওই ভাষণে তিনি তেলের মূল্য বৃদ্ধি কমানো হবে না বলে জানিয়ে দেন। বিরোধীরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আদিবাসীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের মুখে গত কয়েক দশকের মধ্যে ইকুয়েডরের তিন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।noname

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো তেলের মূল্যে সরকারি ভর্তুকি বাতিলের ঘোষণা দিলে ধর্মঘটের ডাক দেয় ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন। পরে ওই ধর্মঘট বাতিল হলেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করছে আদিবাসীরা। আগামী বুধবার রাজধানী কুইটোতে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি চলছে। এসব বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পলা রোমো স্থানীয় একটি রেডিওকে জানান বৃহস্পতিবার থেকে মোট ৪৭৭ জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই মাসের জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট।

সোমবার টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট মোরেনো বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে সামাজিক ভিন্নমতের কারণে বিক্ষোভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, যে ধরণের লুটপাট, ভাংচুর ও সহিংসতা হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে এই বিক্ষোভের মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল এবং সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন করার সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন এই পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও ইকুয়েডরের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া। তবে কোরেয়ার রাজনৈতিক দল সোশ্যাল কমিটমেন্ট পলিটিক্যাল মুভমেন্ট এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরকারি কার্যক্রম রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে সোমবার প্রেসিডেন্ট বলেন সাংবিধানিক ক্ষমতাবলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

সোমবার ইকুয়েডরের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় জানানো হয়, বহিরাগতরা দখল করে নেওয়ায় অ্যামাজন বনাঞ্চলের তিনটি তেলের খনির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে দেশটির তেলের উৎপাদন ১২ শতাংশ কমে গেছে বলেও ওই ঘোষণায় জানানো হয়।

তেলের ভর্তুকি বাতিলের পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো বলেন, এই খাতে সরকারের বার্ষিক ব্যয ১০৩ কোটি মার্কিন ডলার। সরকারের পক্ষে এই ব্যয় আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৭০-এর দশক থেকে দিয়ে আসা ভর্তুকি বাতিলের কারণে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ঋণ কমানোর মাধ্যমে সরকারি কার্যক্রমে গতি আনার লক্ষে ওই ভর্তুকি বাতিল করা হয়েছে বলে যুক্তি দিয়েছে ইকুয়েডর সরকার।