বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় ডাকলেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট

লেবানন সংকট সমাধানের জন্য সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় ডেকেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। হোয়াটসঅ্যাপে কর আরোপ প্রস্তাবের প্রতিবাদে গণবিক্ষোভের ৮ দিন পর  বিক্ষুব্ধদের আলোচনার প্রস্তাব দিলেন তিনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

reuters_lebanon_michel_aoun_24Oct19

২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর হোয়াটসঅ্যাপ এবং একই ধরনের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসগুলোতে কর আরোপ প্রস্তাবের প্রতিবাদন জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয় আন্দোলনকারীরা। ওই কর আরোপের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা, বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসে ওঠে। তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও জীবনমানের অবনতির জন্য প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি’র সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আওয়াজ তোলেন। লেবাননের পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং পার্লামেন্ট ভবন সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় তারা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দফতরই নয়; তার আবাসিক ভবনের বাইরেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক বছরেরও কম সময় আগে ক্ষমতায় আসা হারিরি-র জোট সরকারের জন্য এ বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ভাষণে লেবানিজদের রক্ষা করতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে হারিরি সরকার পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক সংকট দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রেসিডেন্ট আউন। এ সময় তিনি হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের সব ধ্বংস করে দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারাদের নির্দিষ্ট দাবিগুলো শুনতে আপনাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আমি প্রস্তুত। অর্থনৈতিক পতনের বিষয়ে আমাদের আশঙ্কার কথাগুলোও আপনারা শুনবেন। সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায় আলোচনা। আমি আপনাদের অপেক্ষায় রইলাম।’

Capture

যদিও লেবাননের ঋণের ভার বাড়ছে, তবু আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে সরকার নানান অর্থনৈতিক সংস্কার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষেরা বলছেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং দেশের অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণীর বলি হিসেবে তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বৈরুতে বিক্ষোভে অংশ নেয়া আব্দুল্লাহ বলছিলেন, ‘শুধু হোয়াটসঅ্যাপের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমরা এখানে আসিনি। আমরা এখানে সব কিছুর প্রতিবাদে এসেছি; জ্বালানি, খাদ্য, রুটি, সবকিছু।' লেবাননে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে তাদের যখন জেরবার হচ্ছে তখন দেশের নেতা-নেত্রীরা তাদের পদ-পদবী কাজে লাগিয়ে ঘুষ দুর্নীতিসহ নানান কায়দায় নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। বিক্ষোভে অংশ নেয়া ৫০ বছর বয়সী লেবানিজ নাগরিক রাবাব বলছেন, ‘এখানে আমি বহু কিছুই ঘটতে দেখেছি। কিন্তু এমন দুর্নীতিগ্রস্থ সরকার আমি লেবাননে কখনও দেখিনি।’

চলতি সপ্তাহের সোমবারে সরকার একটি সংস্কার প্যাকেজ অনুমোদন দিয়েছে। বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার উপায় হিসেবে, এই প্যাকেজের আওতায় রাজনীতিবিদদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাতে আন্দোলনকারী আশ্বস্ত হতে না পেরে আন্দোলন অব্যাহত রাখে তারা। এমন বাস্তবতায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ওই আহ্বান জানানো হলো।