সৌদি টিভির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে: ইরান

সৌদি অর্থায়নে লন্ডন থেকে ফার্সি ভাষায় প্রচারিত একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তিকে ইরান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার ইরানের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘ইরান ইন্টারন্যাশনাল’ নামের চ্যানেলটি থেকে উসকানি পেয়ে নাশকতামূলক তৎপরতা চালানোর সময় এসব ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে যখন সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিল তখন বিবিসি ফার্সি-র মতো ইরান ইন্টারন্যাশনাল চ্যানেলও দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও করতে দুষ্কৃতিকারীদের মারাত্মক উসকানি দেয়। চ্যানেলটি অনর্থক সামান্য ঘটনাকে বড় করে তুলে ধরে। তারা দুর্বৃত্তদের বেপরোয়া করে তোলে এবং তাদেরকে আরও বড় ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতা চালাতে উসকানি দেয়।

সৌদি আরবের বিশাল বাজেট নিয়ে প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলটির কর্মকাণ্ডকে ইরানের শত্রুদেরকে সহযোগিতার শামিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই চ্যানেলে কর্মরত ব্যক্তি ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি তাদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে যারা দেশের বাইরে অবস্থান করছে তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

এর আগে ইরানের সাম্প্রতিক তীব্র সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটজনকে আটক করা হয়। তেহরানের দাবি, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সঙ্গে আটককৃতদের যোগসাজশ রয়েছে। গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, আটককৃতরা সিআইএ-র অর্থায়নে বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে নাগরিক সাংবাদিকতার আড়ালে সাম্প্রতিক বিক্ষোভে উসকানি দিয়েছে।

গত ১৫ নভেম্বর ইরানি কর্তৃপক্ষ সরকারি রেশনে দেওয়া পেট্রোলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিলে দেশব্যাপী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন প্রায় দেড়শ মানুষ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছে অন্তত ১৪৩ জন। সরকারবিরোধী এই তীব্র আন্দোলনকে ‘ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

দেশজুড়ে আটক হওয়া ‘ভাড়াটে বিক্ষোভকারীদের’ কঠোর শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশটি। দেশটির অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রিভোলিউশনারি গার্ডস কোর (আইআরজিসি)-র ডেপুটি কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভি এমন অঙ্গীকার করেন। বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠিন সাজা দিতে বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আলী ফাদাভি।

ইরানি সামরিক বাহিনীর এই ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, সেসব বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয়েছে যারা প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাড়াটে হিসেবে কাজ করার কথা স্বীকার করেছে। ঈশ্বর চাইলে এ দেশের বিচার ব্যবস্থার মধ্যেই তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে। সূত্র: পার্স টুডে, আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা।