অস্ট্রেলিয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দাবানলে ২ হাজারের বেশি বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এ কারণে উদ্ধারকর্মীরা দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে দাবানলের পরিধি। যার ফলে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। ওই অঞ্চলের দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে। দেশটির দমকল বাহিনী ধারণা করছে, অধিক তাপমাত্রা ও বাতাসের জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণত গ্রীষ্মকালে তাপদাহের কারণে জঙ্গলে দাবানল হয়। স্থানীয়রা একে বলে থাকে বুশফায়ার। এই দাবানল কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, টেলিভিশনের পর্দায় মাঝেমধ্যেই উঠে আসে তার করুণ চিত্র। আগুনের এই রোষের মুখে অসহায় হয়ে পড়ে মানুষ। কখনও সংলগ্ন এলাকা থেকে মানুষজনকে উদ্ধার করা অথবা দাবানলের পথে গাছ কেটে আগুন থামানোর চেষ্টাতেই অবলম্বন খোঁজেন স্থানীয়রা। সরকারিভাবে বিমান থেকে বিশেষ তরল মিশ্রণ ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টাও করা হয়। তবে সে প্রচেষ্টা সব সময় সফল হয় না। তবে বুশফায়ার বা দাবানলপ্রবণ এলাকায় জনবসতি তুলনামূলক কম থাকে। ফলে লোকজনের প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কিছুটা কম হয়। তবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া বিভিন্ন দাবানলে প্রচুর গাছ ও জীবজন্তুর প্রাণহানি ঘটেছে। বাস্ত্তবিদদের আশঙ্কা, কোটি কোটি পশু-পাখি ও প্রাণীর জীবনহানি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ এই দাবানলে এখন পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত ২৫ জন।
নিউ সাউথ ওয়েলসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই এলাকায় আগুনে ১ হাজার ৫শ’ ৮৮ বাড়ি পুড়ে গেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৬শ’ ৫৩ বাড়ি-ঘর। আবার ভিক্টোরিয়াতে প্রায় ২শ’ বাড়ি আগুনে ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়াও অন্যান্য শহরের আরও শতাধিক বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়ে গেছে।
এর মধ্যে স্থানীয় সময় সোমবার রাতে বৃষ্টি হয়েছে। দেশটির সিডনি, মেলবোর্ন ও সাউথ ওয়েলসের কিছু অংশে বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃষ্টির পরেও দাবানলের আগুন কমছে না। এছাড়া মঙ্গলবার আবার তাপমাত্রা বাড়বে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজ্য প্রধান গ্ল্যাডিস বেরেজিকলিয়ান বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে আত্মতুষ্টির কোনও সুযোগ নেই। আমাদের কাজ হলো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, উইনগেলো শহরে বৃষ্টি হওয়ার পর তাপমাত্রা কমলেও সেখানকার আকাশে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। আর নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ায় বৃষ্টি হলেও সেখানকার কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, আগুন আবারও জ্বলে উঠতে পারে।
সোমবার রাতে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া এই মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। যা কিছু অঞ্চলের দাবানল নেভাতে সহায়তা করছে। ওই ঘূর্ণিঝড় দেশের অন্য অঞ্চলের জন্য আশির্বাদ হিসেবেও দেখা দিয়েছে।