কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা এরদোয়ানের

কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। শুক্রবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ নিয়ে চারবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ভাষণ দিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।noname
ভাষণে এরদোয়ান বলেন, পাকিস্তানকে তিনি নিজ দেশের মতোই মনে করেন।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, কয়েকশ বছর আগে তুরস্কের কানাকালেতে যে ধরনের হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল একই ঘটনা ঘটছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে। এর বিরুদ্ধে আঙ্কারা সব সময় প্রতিবাদ করে যাবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো কানাকালের সেই দুঃসময়ে উপমহাদেশের মুসলমানদের সমর্থনের কথা ভুলবো না।’ এ সময় কবি ইকবালের একটি কবিতার পংক্তি উল্লেখ করেন এরদোয়ান।

তিনি বলেন, ‘যে পাকিস্তানিরা আমাদের জন্য এত সমর্থন দিয়েছেন, দোয়া করেছেন আমরা তাদেরকে কিভাবে ভুলে যাবো? আমাদের বন্ধুত্ব ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে নয় বরং এর ভিত্তি হলো ভালোবাসা।’

এরদোয়ান বলেন, ‘আজকে কাশ্মির ইস্যুকে পাকিস্তানিরা যেভাবে দেখছেন আমরাও ঠিক একইভাবে দেখছি। আমরা অতীতের মতো ভবিষ্যতেও পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে যাবো।’

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তান এখন শান্তি এবং স্থিতিশীলতার পথে রয়েছে। তবে এটি খুব সহজে আসে না। এজন্য অনেক কাজ করতে হয়। পাকিস্তান নিশ্চয়ই সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্থিতিশীল হবে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে ইসলামাবাদের পাশে থাকবে আঙ্কারা।

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসরায়েল ঘেঁষা কথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনারও কঠোর সমালোচনা করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটনের ওই প্রস্তাবকে ‘দখলদারিত্বের পরিকল্পনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

এরদোয়ান বলেন, ‘ঈমানদারদের মনে কোনও দেয়াল তুলে দূরত্ব তৈরি করা যায় না। বিশ্বের কোথাও কোনও মুসলমান নিপীড়িত হলে তাদের সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পবিত্র আল-কুদস দখলের জন্য যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে সে ব্যাপারে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত।’

তিনি বলেন, ট্রাম্পের কথিত ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি কোনও শান্তি পরিকল্পনা নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দখলদারিত্বের প্রকল্প। এ সময় তিনি জেরুজালেম বা আল-কুদস শহরকে মুসলমানদের জন্য রেডলাইন বলে ঘোষণা করেন।

এরদোগান বলেন, ‘আমরা সমগ্র দুনিয়ার সামনে ঘোষণা দিতে চাই যে, পবিত্র মসজিদুল আকসাকে ইসরায়েলি প্রশাসনের করুণার ওপর আমরা ছেড়ে দিতে পারি না।’

কাশ্মির ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘কাশ্মিরে আমাদের ভাই-বোনেরা কয়েক দশক ধরে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে একতরফা পদক্ষেপের কারণে সে দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়েছে। সহিংসতা অথবা নির্যাতনের মাধ্যমে নয় বরং কাশ্মির সমস্যার সমাধান হতে হবে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে। এ ধরনের সমাধান সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করবে।’ কাশ্মির ইস্যুতে সবসময় ন্যায়বিচার, শান্তি ও সংলাপের পক্ষে থাকবে তুরস্ক।

দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে পৌঁছান এরদোয়ান। সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তিনি। সূত্র: পার্স টুডে, ডেইলি সাবাহ।