করোনা ভাইরাস: বয়স্ক ও অসুস্থরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে

নতুন করোনা ভাইরাসে ৭০ হাজারের বেশি আক্রান্তের তথ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে চীন। সোমবার দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিসিডিসি) গবেষকরা এই ফলাফল প্রকাশ করেছে। ফলাফল অনুযায়ী আক্রান্ত ৮০ শতাংশের অসুখই সামান্য এবং বয়স্ক মানুষেরাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে ভাইরাসটির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে চিকিৎসাকর্মীরা।noname

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪টি দেশে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব নিয়ে প্রকাশিত প্রথম বিস্তারিত গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে এতে মৃত্যুর হার দুই দশমিক তিন শতাংশ। আর ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে এই হার দুই দশমিক নয় শতাংশ।

সোমবার চীনের জার্নাল অব এপিডেমিয়োলোজিতে প্রকাশিত হয় সিসিডিসির নতুন গবেষণা ফলাফল। এতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭২ হাজার ৩১৪ আক্রান্ত, সন্দেহভাজন ও লক্ষণযুক্ত মানুষের তথ্য স্থান পায়।

গবেষণা ফলাফলে দেখা গেছে প্রায় ৮০ দশমিক নয় শতাংশ সংক্রমণের ঘটনাই খুবই সামান্য এবং মারাত্মক আক্রান্ত ১৩ দশমিক আট শতাংশ এবং মাত্র চার দশমিক সাত শতাংশের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া মৃতের হার সবচেয়ে বেশি ৮০ বছর বা তার চেয়েও বেশি বয়সীদের। এই বয়সীদের মৃতের হার ১৪ দশমিক আট শতাংশ।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, নয় বছর পর্যন্ত বয়সীদের মধ্যে মৃতের ঘটনা নেই। আর ৩৯ বছর পর্যন্ত বয়সীদের মধ্যে মৃতের হার মাত্র দশমিক দুই শতাংশ। এরপরের বয়সীদের মধ্যে এই হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ৪০ এর কোঠায় বয়সীদের মৃতের হার দশমিক চার শতাংশ, ৫০ এর কোঠায় বয়সীদের এক দশমিক তিন শতাংশ, ৬০ এর কোঠায় বয়সীদের তিন দশমিক ছয় শতাংশ এবং ৭০ এর কোঠায় বয়সীদের মৃতের হার আট শতাংশ।

চীনের গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর অসুখে ভোগা ব্যক্তিরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন। এরপরের ঝুঁকিতে রয়েছেন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও হাইপারটেনশনে ভোগা মানুষেরা। চিকিৎসাকর্মীদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট তিন হাজার ১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭১৬ জন নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচ জন।

উল্লেখ্য, চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার নতুন করে মারা যাওয়া ৯৮ জনের মধ্যে অন্তত ৯৩ জন হুবেই প্রদেশের। এছাড়া এদিন নতুন করে আক্রান্ত হওয়া ১৮৬৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই হুবেই প্রদেশের। এনিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭২ হাজার ৪৩৬ জনে।