ভারতীয় সাংবাদিকের কলাম

অনেক সূচকেই ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশিদের নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন দেশটির প্রখ্যাত কলামিস্ট স্বাতি নারায়ণ। সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ভারত যদি নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে। এই অর্ধেক বাংলাদেশি ভারত চলে আসবে।’ তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লেখা এক নিবন্ধে স্বাতি নারায়ণ উল্লেখ করেছেন, অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে এগিয়ে।ঢাকার একটি ব্যস্ত সড়ক পার হচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: রয়টার্স।
স্বাতি নারায়ণ বলেন, আশির দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবেচেয়ে বেশি গড় আয়ু ছিল ভারতীয়দের। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশি নারীরা ভারতের থেকে চার বছর বেশি বেঁচে থাকার প্রত্যাশা করতে পারে। আর এই সাফল্যের পেছনে বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি তিনটি গ্রামে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, চার দশক ধরে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের কাছে ওষুধ সরবরাহ করেছেন। পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে তারা নারীদের সহায়তা করেছেন।

স্বাতি নারায়ণ লিখেছেন, বাংলাদেশের মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করছে। পঞ্চগড় জেলার এক জরিপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের শিশুদের চেয়ে বাংলাদেশের শিশুদের পড়াশোনার দক্ষতা অনেক বেশি। বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি নেই বললেই চলে। এছাড়া শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার সরকারি, বেসরকারি (এনজিও) এবং মাদরাসাগুলোতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে।

তিনি আরও লিখেছেন, পুষ্টি গ্রহণের দিক থেকেও বাংলাদেশ এগিয়ে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী, ভারতে কম ওজন নিয়ে বাস করে ৩৬ শতাংশ শিশু। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কম ওজন নিয়ে বাস করে ৩০ শতাংশ শিশু। এছাড়া, ভারতীয় শিশুদের একটি বৃহত্তর অংশ সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে না।

স্বাতি নারায়ণ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষের বাড়িতে টয়লেট রয়েছে। আমার এক জরিপে ২০১৬ সালের মধ্যে ৯৬ শতাংশ বাড়িতে এবং ৮০ শতাংশ বিদ্যালয়ের সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দেখতে পাই।’

১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওই লেখায় তিনি বলেন, এমনিতেই ইসলাম সুস্বাস্থ্য রক্ষার ওপর জোর দেয়। তাছাড়া স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র পরিবারগুলোতে বিনামূল্যে সিমেন্টের রিং সরবরাহ করছে। তারা নিয়মিতভাবে আলোচনা, মসজিদ, সংবাদমাধ্যম এবং স্কুলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

স্বাতি নারায়ণের এই নিবন্ধের একদিনের মাথায় ১৫ ফেব্রুয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসে সাংবাদিক করণ থাপারের এ সংক্রান্ত একটি কলাম প্রকাশিত হয়। তিনিও বাংলাশের উন্নতির কথা তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে তাতে আমরা ভারতে শুধু হিংসা এবং আগামী দুই বা তিন বছরের মধ্যে তা অর্জনের আশা করতে পারি। আমরা রয়েছি ৫ শতাংশের নিচে, আর বাংলাদেশ ৮ শতাংশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গড় আয়ুষ্কালেরও কথাও উল্লেখ করেন খ্যাতনামা এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীদের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর। আর ভারতে এটি হলো ৬৭ ও ৭০ বছর। এই বড় বিষয়টির দিকে যখন তাকাবেন তখন পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতীয় রাজনীতিকদের নেতিবাচক মন্তব্য নতুন নয়। গত বছর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কথিত অনুপ্রবেশকারীদের (বাংলাভাষী মুসলিম) ‘উইপোকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা বাংলার মাটিতে উইপোকার মতো। বিজেপি সরকার তাদের এক এক করে তুলে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলবে।

অমিত শাহ তার বক্তব্যে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলতে তাদের বাংলাদেশি হিসেবে ইঙ্গিত করেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরেও মুসলমান অভিবাসীদের উইপোকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন অমিত শাহ। সে সময় দলীয় এক সমাবেশে তিনি বলেন, ভারতে থাকা ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ শনাক্ত করে তাদের এক এক করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। একই বছরের আগস্টে কলকাতায় বিজেপির এক সমাবেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতেই ভারতে নাগরিক তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটি হচ্ছে বেছে বেছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় এটি বন্ধ হবে না।