দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে: জাতিসংঘ

কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে আফ্রিকাসহ স্বল্পন্নোত বিশ্বের বেশ কিছু দেশ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) এর জরুরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরিচালক ডমিনিক বারজিওনকে উদ্ধৃত করে এ আভাস দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৭-০৮ সালের দিকে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে যে ধরনের সহিংস পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিলো তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। বিশ্ব চাইলে আসন্ন এ সংকট ঠেকাতে পারে, তবে তা করার সময় ফুরিয়ে আসছে। খুব দ্রুতই সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ত্রাণ বিতরণ

ফসলের ওপর পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে এমনিতেই তীব্র সমস্যার মধ্যে আছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। ৭০ বছরের মধ্যে এ ধরনের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে তাদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই এসব দেশের অন্তত ২ কোটি মানুষ প্রচণ্ডরকমের খাদ্য অনিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির মধ্যে ছিল।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) এর জরুরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরিচালক ডমিনিক বারজিওন বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তাজনিত দিক থেকে কিছু জায়গা দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভাবের মাত্রাটা এমনিতেই অনেক বেশি। এ সময়ে আরেকটি আঘাত তারা সহ্য করতে পারবে না। এ নিয়ে আমরা খুব উদ্বেগে আছি।’

২০০৭-০৮৭ সালের দিকে বিশ্বব্যাপী যখন আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল বিভিন্ন দেশ। আর এতে করে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। এবার তা না করতে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডমিনিক। তিনি বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবিকতারই প্রশ্ন নয় শুধু, এটি বিশ্বের নিরাপত্তারও প্রশ্ন। বিশ্বেকর কিছু অংশের পরিস্থিতি যেন খাদ্য নিয়ে সহিংসতার মতো অবস্থা তৈরি না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ডমিনিক বারজিওনের এ আশঙ্কাকে সমর্থন জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সিনিয়র অপারেশনস ডিরেক্টর আমির দাউদি। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১০ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সংস্থাটি। ডমিনিকের মতো আমির দাউদিও মনে করেন, ২০০৭-৮ সালের মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘মনে আছে ২০০৭ সালে খাদ্যদব্যের উচ্চ মূল্য সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সেরকম পরিস্থিতি ঠেকাতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একত্রিত হতে হবে। বিশ্বে অসহায় দেশগুলোকে সমর্থন দিতে পারলে খাদ্য সংকট ঠেকানো সম্ভব হবে। দাউদি আরও বলেন, ‘সংকটকে কেন্দ্র করে এখনও খাদ্যদ্রব্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। আন্তর্জাতিক সমন্বয়ই পারে খাদ্যের দাম সাধ্যের মধ্যে রাখতে এবং যেসব এলাকায় খাদ্যাভাব আছে সেখানে খাবার পৌঁছে দিতে। সে লক্ষ্য পূরণে দেশগুলোতে সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনা করতে হবে।’