কেবল শ্বাসতন্ত্র নয়, সংক্রমিত হতে পারে পুরো শরীর

শুধু শ্বাসতন্ত্রই নয়, মানুষের পুরো শরীরকেই সংক্রমিত করতে পারে নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাস। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টকে কোভিড-১৯-এর মূল লক্ষণ বলে মনে করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধা বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসাড় হয়ে যাওয়ার ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের করোনা আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন চিকিৎসকের বর্ণনার ভিত্তিতে বিশ্লেষণটি করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

noname

প্রতিবেদনের শুরুতেই কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়া ৩৮ বছর বয়সী এক তরুণের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম ১০ দিন বেশ সুস্থই ছিলেন ওই মার্কিন রোগী। নিউ ইয়র্কের পোমোনায় ভাস্কুলার সার্জন শন ওয়েনজেরটার ওই রোগী সম্পর্কে বলেন, ‘তার ফুসফুসে হালকা উপসর্গ ছিল। বাসাতেই ছিলেন তিনি। একটি জরুরি সেবা ক্লিনিকে তার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। বাড়িতে ভালোই ছিলেন তিনি। সামান্য কাশি ছিল শুধু।’

হঠাৎ করেই তার মধ্যে নতুন উপসর্গ দেখা দিলো। ওয়েস্টচেস্টার মেডিক্যাল সেন্টার হেলথের গুড সামারিতান হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারির বিভাগীয় প্রধান শন ওয়েনজেরটার আরও বলেন, ‘তখন ঘুম থেকে ওঠার সময় তিনি দেখলেন দুই পা কেমন যেন অসাড় হয়ে আছে, ঠান্ডা হয়ে আছে এবং তিনি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে হাঁটতে পারছেন না।’

এ তরুণের ক্ষেত্রে এওরটিক জটিলতা হয়েছিল, অর্থাৎ মূল ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। ঠিক যেখান থেকে এটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুই পায়ের দিকে চলে গেছে সেখানেই রক্ত জমাট বেঁধেছিল। রক্ত তখন ইলিয়াক ধমনীর মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারছিল না এবং পা-গুলো চলাচলের শক্তি হারাচ্ছিল।

সিএনএন-কে ওয়েনজেরটার বলেন, ‘এটি এতটাই ভয়াবহ জটিলতা যে ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর এক্ষেত্রে মৃত্যু হতে পারে। তবে ৩৮ বছর বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটা দেখা যায় না।’

দ্রুত সমস্যা শনাক্ত করে ওই রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব এবং তার ধমনী থেকে জমাট বাঁধা রক্ত বের করে আনা হয়েছিল। আর তাতে জীবন বেঁচে গেছে তার। ওয়েনজেরটার বলেন, ‘আমাদের দুই সার্জন তাকে একনাগাড়ে চিকিৎসা দিয়ে গেছেন।’

ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিন-এর সার্জারি টিমের সহকারী অধ্যাপক ড. স্কট ব্রাকেনরিজ বলেন, ‘একটি বিষয় একইসঙ্গে কৌতূহলের ও হতাশার। আর তা হলো, এ রোগটি বিভিন্নভাবে নিজের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসগ্রহণ ক্ষমতার ওপর তীব্র প্রভাব পড়ে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হয় এবং এতে সব অঙ্গ অচল হয়ে পড়ে। আর এখন এটি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরও প্রভাব ফেলছে।’