পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাসের সন্ধান


বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাস শনাক্ত করেছেন কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে থাকা দক্ষিণ মহাসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাস সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন। প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে সোমবার (১ জুন) ওই গবেষণার ফল প্রকাশ হয়। সেখানে অ্যান্টার্কটিকার সেই অঞ্চলটিকে ‘সত্যিকার অর্থে আদিম’ বলে উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
প্রতীকী ছবিবায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী একটি জনস্বাস্থ্য সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে এ কারণে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বায়ুদূষণ হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্বের নগর এলাকায় বসবাসরত ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ বায়ুদূষণের এমন মাত্রার মধ্যে বসবাস করছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মাত্রাকে অতিক্রম করে গেছে।
 
আবহাওয়া ও জলবায়ু পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলো আবার পৃথিবীর এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণ ভৌগোলিক সীমানা পার হতে পারে সহজে। দূষণের উৎসস্থল থেকে শত শত মাইল দূরের মানুষকেও আক্রান্ত করে। এমন অবস্থায় বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাসের এলাকার সন্ধানে নামে কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
 
অধ্যাপক সোনিয়া ক্রেইডেনউয়িস ও তার দল আগেই ধারণা করেছিলেন যে দক্ষিণ মহাসাগর এলাকার বায়ুমণ্ডল মানুষের কর্মকাণ্ড ও ধুলা দ্বারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এলাকায় বায়োঅ্যারোসল কম্পোজিশন নিয়ে গবেষণা চালান তারা। এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম। বাতাসে কী আছে এবং কোথা থেকে এসেছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা করেন তারা। গবেষকরা দেখেছেন, দক্ষিণ মহাসাগরের বায়ুমণ্ডলের একেবারে নিচের স্তরে বিষাক্ত অ্যারোসল কণার অস্তিত্ব নেই। কঠিন ও তরল কণা দ্বারা গঠিত অ্যারোসল বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, সার উৎপাদনসহ মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ অ্যারোসল কণার উৎপত্তি হয়ে থাকে।
 
বায়ুমণ্ডলের যে অংশটি সমুদ্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত সেখান থেকে বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর অংশ হিসেবে, একটি নৌকায় করে অ্যান্টার্কটিকার বরফ প্রান্ত থেকে তাসমানিয়া, অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত গিয়েছেন তারা। এরপর বাতাসে জন্ম নেওয়া অণুজীবগুলোর সংমিশ্রণ পরীক্ষা করেছেন।
 
গবেষকরা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দক্ষিণ মহাসাগর এলাকার মেঘকে যে অ্যারোসলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে তা সমুদ্রের জৈবিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।’ দক্ষিণ মহাসাগর হলো বিশ্বের গুটিকয়েক এলাকার একটি, যা নৃতাত্ত্বিক কারণে একেবারেই কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।