লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করতে মিসরের প্রতি আহ্বান হাফতার বাহিনীর

লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে মোকাবিলায় দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে মিসরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হাফতার বাহিনী। মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত এ বাহিনী ইতোমধ্যে দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকার দখল নিতে সমর্থ হয়েছে। সেখানে নিজস্ব স্টাইলে পার্লামেন্টও স্থাপন করা হয়েছে। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতার। তার নেতৃত্বাধীন পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্ট থেকেই মিসরের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।15

লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রতি তুরস্কের সমর্থন মোকাবিলায় মিসরের সামরিক হস্তক্ষেপ অনুমোদনের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে হাফতারের পার্লামেন্ট।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বহিঃশক্তির সমর্থন নিয়ে ত্রিপোলি দখলের চেষ্টা করে আসছিল হাফতার বাহিনী। তবে লিবিয়া সরকারের আমন্ত্রণে তুরস্ক এতে যুক্ত হওয়ার পরই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। গত জানুয়ারিতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেন, লিবিয়ার সঙ্গে তুরস্কের ঐতিহাসিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। আঙ্কারা হস্তক্ষেপ না করলে হাফতার পুরো দেশটি দখল করে ফেলতো।

জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ওই ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত।

গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিএনএ-এর কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ-এর দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্য এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, ফ্রান্স, মিসর ও সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন।