পাখির জন্য ৩৫ দিন অন্ধকারে গ্রামবাসী!

গ্রামের কমিউনিটি সুইচবোর্ডের মধ্যেই বাসা বেঁধেছিল একটি পাখি। সেখানে নীল ও সবুজ রঙের ডিমও পাড়ে। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক ব্যক্তি সেই বাসাটির ছবি শেয়ার করেন। এরপরেই গ্রামবাসী সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, ডিম ফুটে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত তারা এমন কিছু করবে না যাতে পাখিটিকে পালিয়ে যেতে হয়। সেই অনুযায়ী টানা ৩৫ দিন ওই সুইচ বোর্ডে হাত দেয়নি তারা। রাস্তার লাইটের সব সুইচ ওই বোর্ডে থাকায় এই এক মাসেরও বেশি সময় তাদেরকে অন্ধকার পথে যাতাযাত করতে হয়েছে।noname

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময়ের খবরে বলা হয়েছে,  বেশ কিছুদিন ধরে একটা ছোট্ট বুলবুলি পাখি তামিলনাড়ুর শিবাগঙ্গা জেলার পোথাকুড়ি গ্রামের কমিউনিটি সুইচবোর্ডের মধ্যে বাসা বাঁধে। তাতে তিনটি ডিমও পাড়ে সে। পাখির বাসা ও ডিম রক্ষা করতে গিয়ে গ্রামবাসী টানা ৩৫ দিন রাস্তা অন্ধকার রেখেই যাতায়াত করে।

কলেজ পড়ুয়া কারুপ্পুরাজা জানান, তার বাড়ির একদম কাছেই রয়েছে কমিউনিটি সুইচবোর্ড। গ্রামে মোট ৩৫টি স্ট্রিটলাইট রয়েছে। সেগুলোর সব সুইচ রয়েছে এখানে। মারাভামঙ্গলমের কাছে সেথাম্বল পঞ্চায়েতের ওই গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তার কথায়, ‘লকডাউন শুরু হতেই আমি দেখি একটি পাখি খড়, গাছের পাতা নিয়ে বক্সের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। যখন বোর্ডের ঢাকনা খুলে দেখি, সেখানে তিনটি ছোট্ট ছোট্ট সুবজ-নীলচে ডিম পেড়েছে পাখিটি।’

তখনই গ্রামের তরুণরা সিদ্ধান্ত নেয় যেভাবেই হোক পাখি ও তার ডিমগুলো রক্ষা করবেন। সেই সিদ্ধান্ত পাকা করতে একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। যেখানে গ্রামের সব তরুণরা তো আছেই, এ ছাড়া গ্রামের আরও ৩৫ জন রয়েছেন সেখানে। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পাখিটিকে শান্তিতে বাসার মধ্যে থাকতে দেয়া হবে। ডিম ফুটে ছানা যতদিন না বড় হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই লড়াইটা চলবে। যেমন ভাবা তেমনই কাজ।

গ্রুপের সবাই রাজি হলেও গ্রামের ১০০ পরিবারকে বোঝানোও ছিল কিছুটা কষ্টকর। বাসা থেকে যতক্ষণ পাখি ও তার ছানাগুলো উড়ে যাচ্ছে, ততদিন কি গ্রামের মানুষেরা অপেক্ষা করবে? কিছু মানুষ এগিয়ে এলো, কিছু মানুষ ওই ছোট্ট পাখির জন্য গোটা একমাস আলো নিভিয়ে রাখাটা নির্বোধ আখ্যা দিলো। তবে তাদেরও কোনোভাবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এলাকার তরুণ-তরুণীরা। এক পর্যায়ে ৩৫ দিনের জন্য রাস্তার কোনও আলো জ্বালানো হবে না, এই বিবৃতিতে সকলে রাজি হয়ে যায়।

গ্রামের এক বাসিন্দা সেলভি বলেন, ‘এ কদিন ধরে মোবাইলের টর্চ, টর্চ লাইট ব্যবহার করেই কাটিয়েছি। তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি।’

পাখির আচরণের ওপর লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব ছিল দুই ভাই মূর্তি ও কার্তির ওপর। তারা প্রতিদিনই বাক্স খুলে একবার করে দেখে আসত। মা পাখি উড়ে যেতেই চোখ রাখত বাসার ওপর। দিনে দিনে একটু একটু করে বড় হচ্ছে পাখির ছানাগুলো। তাদের গায়ে এখন অল্প অল্প ছোট পালক গজিয়েছে। দুটি পাখা গজিয়েছে। মা পাখির মতো রঙও ধারণ করেছে সেগুলো। তাদের কথায়, ‌‘আমরা প্রতিদিন বাসাটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। কোনও বিদ্যুতের তার ঝুলে রয়েছে কি না, দেখি। এর মধ্যে অন্য কোনও হামলা হয়েছে কি না, সব দিকেই নজর রাখি আমরা।’