হিজবুল্লাহর হামলা প্রতিহতের দাবি ইসরায়েলের

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইসরায়েলের সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি লেবানন ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যে কোনও হামলার বিষয়ে কড়া সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, দখলকৃত সিরীয় গোলান উপত্যকার মাউন্ট ডোভ এলাকায় ঢুকে পড়ে হিজবুল্লাহর চার সশস্ত্র সদস্য। তবে প্রতিরোধের মুখে তারা লেবানন ভূখণ্ডে ফেরত গেছে। এক বিবৃতিতে কোনও সংঘাতে জড়ানোর কথা অস্বীকার করেছে হিজবুল্লাহ। এর পরিবর্তে তারা ওই ঘটনার জন্য ‘ভীত শত্রুদের’ দায়ী করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।মাউন্ট ডোভ এলাকা থেকে সোমবার বিকেলে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকে। লেবাননের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি এই গোষ্ঠীটিরও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। মূলত লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে হিজবুল্লাহ। তাছাড়া রাজনৈতিক মিত্রদের মাধ্যমে দেশটির সরকারের অভ্যন্তরেও তাদের প্রভাব রয়েছে।

গত সপ্তাহে এক হিজবুল্লাহর সদস্য নিহতের পর থেকে মাউন্ট ডোভ এলাকায় উত্তেজনা চলছে। গত সপ্তাহে সিরিয়ায় চালানো এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় ওই হিজবুল্লাহ সদস্য হয়। গত সোমবার (২০ জুলাই) ভোরে ওই হামলা চালানোর কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনওটিই করেনি ইসরায়েল। তবে এর প্রতিশোধ না নিতে হিজবুল্লাহকে সতর্ক করে দেয় দেশটি।

মাউন্ট ডোভ এলাকায় সোমবারের ঘটনার বিষয়ে সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হিজবুল্লাহ সদস্যদের একটি দল ইসরায়েলি সেনা চৌকিতে হামলার পরিকল্পনা করে। তবে ইসরায়েলি বাহিনী ওই সদস্যদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় আর তারা জাতিসংঘ স্বীকৃত ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের ব্লু লাইন অতিক্রম করলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হিজবুল্লাহ সদস্যদের লক্ষ্য করে কামান থেকে গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এই ঘটনায় লেবাননের তরফে কোনও হতাহতের কথা জানা যায়নি।

গুলিবর্ষণের ঘটনার পর এক টেলিভিশণ ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই ঘটনার এবং লেবাননের ভূখন্ড থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনও হামলা চালানো হলে তার সম্পূর্ণ দায় হিজবুল্লাহ ও লেবাননকে বহন করতে হবে। হিজবুল্লাহর জানা উচিত এটা আগুন নিয়ে খেলা।’

এদিকে এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, সোমবার কোনও ধরণের সংঘাত, গুলিবর্ষণ কিংবা অনুপ্রবেশের ঘটনায় তাদের সদস্যরা যুক্ত ছিল না। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এতে যুক্ত ছিল কেবল একটি পক্ষ, তারা হলো ভীত, উদ্বিগ্ন আর চিন্তায় জর্জরিত শত্রু।’ তবে গত সপ্তাহে নিহত সদস্যের মৃত্যুর প্রতিশোধ সামনের দিনগুলোতে অবশ্যই নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয় ওই বিবৃতিতে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার শত্রুতা পুরনো। ২০০৬ সালে উভয় পক্ষ মাসব্যাপী যুদ্ধে জড়ায়। হিজবুল্লাহর সদস্যরা আট ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করে দুই জনকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে ওই যুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধে লেবাননের প্রায় এক হাজার ১৯১ জন মানুষ নিহত হয়। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক। অন্যদিকে ইসরায়েলের ১২১ সেনা সদস্য ও ৪৪ বেসামরিক নাগরিক ওই যুদ্ধে নিহত হয়।