বাংলাদেশে ফিরতে আগ্রহী রায়হান কবির: আইনজীবী

মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি রায়হান কবিরের সঙ্গে দেখা করেছেন তার দুই আইনজীবী। বুধবার (২৯ জুলাই) সে দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন আইনজীবী সুমিতা শান্তিন্নি কিশনা এবং সেলভরাজ চিনিয়াহ। পরে তারা জানান, রায়হান নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ওই দুই আইনজীবীর দাবি, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় দেওয়া নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন রায়হান। দেশটির সংবাদমাধ্যম মালয় মেইল-এর এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।মালয়েশিয়ায় গ্রেফতারের পর রায়হান কবির

মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মীদের ওপর নিপীড়নমূলক আচরণ নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার কারণে গ্রেফতার করা হয় রায়হানকে। পরে তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রায়হানের মামলার সঙ্গে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেন মালয়েশীয় আইনজীবী সুমিতা শান্তিন্নি কিশনা ও সেলভরাজ চিনিয়াহ।

বুধবার রায়হান কবিরের সঙ্গে দেখা করার পর সেলভরাজ চিনিয়াহ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করার কোনও উদ্দেশ্য তার ছিল না। অভিযানের সময় যা ঘটতে দেখেছিলেন তা নিয়ে কেবল নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন রায়হান। কর্তৃপক্ষ যখনই তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিক তখনই তিনি ফিরে যেতে আগ্রহী। পরিবারের কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী তিনি।’

আইনজীবীরা জানান, আলজাজিরার সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন রায়হান। মে মাসে কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে নিজের বন্ধুদের আটক হতে দেখে আবেগাক্রান্ত হয়ে ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন বলে জানান কবির। সেলভরাজ চিনিয়াহ বলেন, ‘তিনি আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করতে চাননি...এই বিষয়ে পুলিশ তার বক্তব্য ইতোমধ্যে নথিভুক্ত করেছে।’

আটকের পর থেকেই রায়হান কবিরের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ ভালো আচরণ করেছে বলেও দাবি করেন আইনজীবী সেলভরাজ চিনিয়াহ। বলেন, ‘তাকে ভালো খাবার দেওয়ার পাশাপাশি তার সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হয়েছে... কোনও অভিযোগ নেই তার।’

আইনজীবীরা বলেন, রায়হান কবিরকে নিয়ে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং তাকে কবে ফেরত পাঠানো হবে তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

আলজাজিরায় প্রচারিত ‘১০১ ইস্ট’ অনুষ্ঠানে “লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন” শিরোনামে ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এতে করোনাভাইরাস মহামারিতে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে সরকারের আচরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন রায়হান কবির। সংবাদমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে এর সমালোচনা শুরু করে মালয়েশিয়া। দেশটির সরকার ওই প্রতিবেদনে তোলা অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আলজাজিরার বেশ কয়েকজন কর্মীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমটি।

আলজাজিরার ওই প্রতিবেদন প্রচারের পর থেকেই সাক্ষাৎকারদাতা বাংলাদেশি রায়হান কবিরের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিও দেওয়া হয়। পরে রায়হানের ওয়ার্ক পারমিট (কাজের অনুমতি) বাতিল করে দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হন তিনি।