হজের জন্য মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা, আটক ২৪৪

হজ পালনের জন্য পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশের চেষ্টার দায়ে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী। সাফা নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে মিডলইস্ট মনিটর জানিয়েছে এ ঘটনায় ২৪৪ জনকে আটক করা হয়েছে।noname

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ওই ব্যক্তিরা মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেছিল।

এই হজের মৌসুমে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে নেওয়া বিধিনিষেধ মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, বিনা অনুমতিতে কেউ মক্কায় প্রবেশ করলে তাকে দেশছাড়া করার পাশাপাশি ১০০ রিয়াল জরিমানা করা হবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে সৌদি আরবে পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হয়। বৃহস্পতিবার হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালিত হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির ফলে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার খুবই সীমিত পরিসরে হজ পালনের অনুমতি দিয়েছে সৌদি সরকার। গত বছর যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেছিলেন, সেখানে এবার এ সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ১০ হাজার জন। তাদের সবাই সৌদি আরবে অবস্থানরত। অর্থাৎ, এবার সৌদি আরবের বাইরে থেকে গিয়ে কাউকে হজ করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে যারা সুযোগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী।

এ বছর হজে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত রাখা হলেও এর অন্যতম মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরাফাত ময়দানে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে দেওয়া খুতবা সম্প্রচারের সময় বাংলাসহ মোট ১০টি ভাষায় তা অনুবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় হজের এ সময়টিতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার। হাজিদের প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। হজ শুরুর আগে দুই ধাপে কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আনুষঙ্গিক স্থাপনাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হয়েছে। হজের সময় সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাজিদের প্রত্যেকের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

হাজিদের জন্য ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদ নামক কালো পাথরে চুমু দেওয়া ও স্পর্শ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংক্রমণ যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য জমজমের পবিত্র পানি পানেও থাকছে বিধিনিষেধ। এবার সবার জন্য জমজমের পবিত্র পানি সরবরাহ করা হবে প্লাস্টিকের প্যাকেটে। সেই পানিই পান করতে হবে সবাইকে।

বিশেষ পরিস্থিতির কারণে শয়তানকে পাথর ছোড়ার আনুষ্ঠানিকতায়ও থাকছে নতুনত্ব। এবার সর্বোচ্চ ৫০ জন হাজি একসঙ্গে পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। তবে এটি সাধারণ কোনও পাথর নয়। এবার জীবাণুমুক্ত পাথর সরবরাহ করা হবে হাজিদের।

সৌদি আরবের সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (সিডিসি)- এর পক্ষ থেকে এ বছরের হজ পালনের একটি নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুরো হজের সময় মুসল্লিদের এক মিটার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এমনকি নামাজ ও কাবা শরিফ তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করার সময়ও তা মেনে চলতে হবে।

পবিত্র হজের খবর প্রচারেও পড়েছে করোনার প্রভাব। এবার কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে হজ কাভার করার অনুমতি দেয়নি সৌদি সরকার।

উল্লেখ্য, ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হচ্ছে পবিত্র হজ। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ বা বাধ্যতামূলক। প্রতি বছর সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজনে অংশ নিতে সৌদি আরবে সমবেত হন প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সূত্র: মিডলইস্ট মনিটর, ডিডব্লিউ, বিবিসি।