যখন ইসরায়েলি বোমা আছড়ে পড়ছে, আর তেহরানের আকাশ আলো করে জ্বলে উঠছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ঠিক তখনই নির্জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেহালা বাজাচ্ছেন এক তরুণ।
তেহরানের এক ফাঁকা সড়কে দাঁড়ানো সেই বেহালাবাদক বললেন, আমি রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু চাই মানুষ অন্তত মনে রাখুক যে, ভালোবাসা ও সংগীতের শব্দ বোমার চেয়েও শক্তিশালী।
নিজের নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম যে, জীবন এখনও চলছে।
এই সংগীতই যেন হয়ে উঠেছিল শহরের নীরব রাতগুলোতে মানুষের সাহসের উৎস, এক মুহূর্তের স্বস্তি।
ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১২ দিনের যুদ্ধকালে ইরানে অন্তত ৬১০ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৭৪৬ জন আহত হন ইসরায়েলি হামলায়।
তবে যুদ্ধবিরতির খবরে যখন দেশে স্বস্তি নেমে আসে, তখনই ভাইরাল হয় সেই বেহালাবাদকের ভিডিও।
ভিডিওটি দেখে এলমিরা নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী নিজেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। তিনি বলেন, এই সময়ে সবচেয়ে দরকার একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। আমি চেয়েছিলাম অন্তত কয়েকজনের মন থেকে ভয় কিছুটা হলেও সরাতে।
১৭ জুন সকালে তেহরানে এক অভিনব প্রচেষ্টা দেখা যায়। সংগীতশিল্পী পারসা মোস্লেহিফার ও চিত্রশিল্পী আরমিন মোখতারি একসঙ্গে ছাদের ওপরে পরিবেশনা করেন।
‘উইমেন, লাইফ, ফ্রিডম’ আন্দোলনের সময় প্রতীকী পিয়ানো বাজিয়ে খ্যাতি পাওয়া পারসা শহরের প্রেক্ষাপটে পিয়ানো বাজাতে থাকেন। পাশেই আরমিন আঁকেন যুদ্ধের কারণে রাজধানী ছেড়ে পালানো মানুষের দৃশ্য, পেছনে মিলাদ টাওয়ারের ছায়া।
তেহরানের সাংস্কৃতিক সাংবাদিক এলহাম জানান, সংগীত, চিত্রকলা ও শিল্প—এসব যুদ্ধ, ধ্বংস ও বোমার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা ইরানিরা শান্তিপ্রিয় জাতি, সেটা ইতিহাস বলেছে। এই শিল্পকর্ম কেবল বেদনা উপশম করে না, ভবিষ্যতের প্রস্তুতিও দেয়।
তেহরানের আর্ট অ্যাকাডেমির ২৪ বছর বয়সী সংগীতের ছাত্র মেহরজাদ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বন্ধু পিয়ানো, বেহালা, গিটার থেকে শুরু করে সেতার, তানপুরা সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সংগীত পরিবেশন করছি।
তার কথায়, মানুষ খুব ভালোভাবে গ্রহণ করছে। আমরা কেবল সংগীত বাজাইনি, ভালোবাসা ছড়াতে চেয়েছি। এই যুদ্ধ আমাদের আরও কাছাকাছি এনেছে।
যখন বোমা চলে, জীবন থেমে যায় না—তেহরানের এই শিল্পীরা সেটিই প্রমাণ করলেন। যুদ্ধ থামলেও দুঃসহ স্মৃতি থেকে মানুষ যে এখনও মুক্ত নয়, তা বোঝা যায় তাদের সুরের ভেতরে। সংগীত শুধু প্রতিরোধ নয়, এটা হয়ে উঠেছে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার ভাষা, একটি জাতির শোককে সাহসে রূপান্তরিত করার শিল্প।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই