‘করোনাভাইরাসের চেয়েও শিশুদের স্কুলে না যাওয়া বেশি ক্ষতিকর’

ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ‍অধ্যাপক ক্রিস হুইটি মন্তব্য করেছেন, শিশুরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে স্কুলে না গেলে। তার মতে, স্কুলে না যাওয়ার কারণে শিশুরা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। শনিবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন হুইটি।

noname

স্কুল খোলা ও শিশুদের বিষয়ে এক যুক্ত বিবৃতি দিতে শনিবার প্রধান ও উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন হুইটি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে শিশুদের মারা যাওয়ার আশঙ্কা অবিশ্বাস্য রকম কম। তবে স্কুলে না যাওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদে তারা শরীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হবে।’

করোনাভাইরাস মহামারিতে ইউরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের একটি যুক্তরাজ্য। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ৪৭ হাজার।

ভাইরাসের বিস্তার রোধে অন্যান্য দেশের মত সেখানেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের লাখ লাখ শিশু সেপ্টেম্বরে স্কুলে ফেরার অপেক্ষায় আছে।

অধ্যাপক হুইটি বলেন, আরও অন্তত নয় মাস আমাদেরকে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত ২০২০ সালের মধ্যে কোনও টিকা পাওয়া যাবে না। যদিও আগামী শীতের আগে (২০২১-২২) একটি কার্যকর টিকা পাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে।’

বিবিসি জানিয়েছে, ইংল্যান্ডে সেপ্টেম্বর থেকে সব বয়সের, সব বর্ষের এবং সব গ্রুপের শিক্ষার্থীদের ‘ফুল-টাইম’ ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্কটল্যান্ডে এরই মধ্যে স্কুল খুলে গেছে।

চিকিৎসা উপদেষ্টা অধ্যাপক হুইটি বলেন, ‘অনেক শিশু স্কুলে যাওয়ার চেয়ে স্কুলে না যাওয়ার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বেই এখন একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হল, শিশুরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে না বা তাদের খুব একটা হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না।’

যেহেতু কোভিড-১৯ এর কোনো কার্যকর টিকা এখনও হাতে পাওয়া যায়নি তাই এখন পর্যন্ত ‘ঝুঁকি মুক্ত কোনো পথ’ নেই। যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা কর্মকর্তারা তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের স্কুল খোলার ঝুঁকি এবং লাভ উভয়ের গুরুত্ব বোঝার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের পর দিন স্কুলে না যাওয়ায় শিশুদের দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভোগার ঝুঁকি অনেক বেশি। অধ্যাপক হুইটি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে যে কয়টি শিশু মারা গেছে তাদের প্রায় সবাই আগে থেকে কোনও না কোনও জটিল রোগে ভুগছিল।”

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ১৯ বছরের কম বয়সের ১০ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ২০ বা তার অধিক বয়সে মোট মৃত্যু ৪৬,৭২৫।