চীনা শ্বেতপত্রেই উইঘুর নিপীড়নের ইঙ্গিত

এক শ্বেতপত্রে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলমান এবং অন্যান্য নৃতাতিত্ত্বক জাতিগোষ্ঠীর জন পরিচালিত অন্তবর্তীকালীন ক্যাম্প পরিচালনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সরকার। তবে এই শ্বেতপত্রেই চীন সরকারের শ্রম কর্মসূচির ব্যাপকতারও ইঙ্গিত মিলেছে। গবেষকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে একটি কেন্দ্রিভূত এবং সামরিকায়িত জবরদস্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালানোর সম্ভাব্যতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।noname

জিনজিয়াং প্রদেশে পরিচালিত অন্তবর্তীকালীন ক্যাম্প নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বেইজিং। এসব ক্যাম্পে নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও তা অস্বীকার করে আসছে চীন। ওই শ্বেতপত্রে এগুলোকে ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘সক্রিয় শ্রম এবং কর্মসংস্থান নীতির মাধ্যমে জিনজিয়াং ক্রমাগতভাবে মানুষের বস্তুগত এবং সাংস্কৃতিক জীবনের উন্নতি ঘটাচ্ছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের মানবাধিকার এবং উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।’

ওই শ্বেতপত্রে এসব কর্মসূচিতে সুযোগ পাওয়া মানুষের পরিসংখ্যানও যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের আওতায় এসেছে। তবে একজন ব্যক্তি কতবার এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে থেকেছে সেবিষয়ে কোনও তথ্য শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। জিনজিয়াং বিষয়ক লেখক ও অ্যাকাডেমিক আদ্রিয়ান জেনজ বলেন, ‘এই সংখ্যাগুলো প্রান্তিক অতিরিক্ত শ্রমিকদের সম্ভাব্য জবরদস্তিমূলক প্রশিক্ষণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।’

চীনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘুদের অন্তবর্তী শিবিরে আটক রাখা, নজরদারি, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের ওপর বাধাপ্রদান এবং নারীদের জোর করে বন্ধ্যাকরণের নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পক্ষে বিপুল প্রমাণও বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কার্যক্রম সাংস্কৃতিক গণহত্যা বলে বিবেচিত হতে পারে।

বেইজিং এসব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে আসছে। চীনের দাবি, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং দারিদ্রতা নিরসনে এসব কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে অতি গোপনীয়তার সঙ্গে পরিচালিত এসব শিবিরে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেয় না বেইজিং।

সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন নিপীড়ন বন্ধে চীনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জিনজিয়াং থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে এবং পোশাক জায়ান্ট এইচ অ্যান্ড এম’র মতো কোম্পানিগুলো ওই অঞ্চলের উৎপাদবকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

উইঘুর মানবাধিকার প্রজেক্টের পিটার আরউইন বলেন, চীন যখন মনে করে স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিভিন্ন রিপোটিং বেড়ে যাচ্ছে তখন তারা প্রায়ই শ্বেতপত্র প্রকাশ করে থাকে। তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে উইঘুরদের সাতটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চীনা শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বছরে গড়ে প্রায় ২৭ লাখ ৬০ হাজার অতিরিক্ত প্রান্তিক শ্রমিককে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই দক্ষিণাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের।

অ্যাকাডেমিক আদ্রিয়ান জেনজ জানান, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশের দরিদ্র হিসেবে নিবন্ধিত বাড়ির এক লাখ ৫৫ হাজার মানুষকে নিজ শহরের বাইরে কাজে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষই অন্তবর্তীকালীন শিবির থেকে ছাড়া পাওয়া। এছাড়া কাসঘার এবং হোতান এলাকার আরও এক লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে নিজ শহরের বাইরে কাজে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, অন্তবর্তীকালীন শিবিরগুলোর মূল লক্ষ্যবস্তু হলো প্রান্তিক দক্ষিণ জিনজিয়াংয়ের দরিদ্র বাড়িগুলো। এদের অনেককেই প্রাথমিকভাবে অন্তবর্তীকালীন শিবিরের আশেপাশে কাজে নিযুক্ত করা হয়। পরে তারা বাড়ি ফিরতে সুযোগ পায়।

ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেসের জামরেতায় আরকিন বলেন, বেইজিংয়ের ওই শ্বেতপত্র চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আরেকটি মিথ্যাচার এবং অন্তবর্তীকালীন শিবিরের অস্তিত্ব এবং সেখানে সহিংসতা ও নিপীড়ন চালানোর দায় এড়ানোর আরেকটি প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বড় বড় কোম্পানিগুলোর উচ্চ পদের চাকুরিগুলোতে চীনের হান জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিযুক্ত করা হয় আর উইঘুরদের বিনা বেতন কিংবা কম বেতনে ছোট ছোট পদে নিযুক্ত হতে বাধ্য করা হয়।’