বসনিয়ার জঙ্গলে অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি দল!

বসনিয়ার জঙ্গলে অবস্থান নেওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি তরুণদের একাংশ, ছবি-রয়টার্সইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে প্রবেশের লক্ষ্যে জঙ্গলে অবস্থান নিয়েছেন কয়েকশত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি দল। ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী বসনিয়ান জঙ্গলে সন্ধান মিলেছে এই দলটির। বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অভিবাসনপ্রত্যাসীরা এই দলে রয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিবাসন আইন কঠোর করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি বাস্তবায়নের আগেই দ্রুতগতিতে এইসব অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইইউ’র দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।

২০১৫-১৬ সালে বলকান অভ্যুত্থানের পর থেকে ট্রানজিট রুট হিসেবে দারিদ্র্যপীড়িত বসনিয়াকে এড়িয়ে চলেছে অভিবাসনপ্রত্যাসী ও শরণার্থীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বসনিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চল মহা সমারোহে শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে রয়টার্সের প্রতিবেদন।

চলছে রান্না খাওয়া, ছবি- রয়টার্সবার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশি তরুণ মোহাম্মদ আবুল বলেন, এখানে পরিস্থিতি খুবই মানবেতর। ঘর নেই, পানি নেই, বাথরুম নেই। নেই কোনও চিকিৎসা সেবা।

আবুল ছাড়া আরও প্রায় পাঁচশ’ তরুণ এই জঙ্গলে একটি পরিত্যাক্ত কারখানা ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে বাঁচবার জন্য কোনমতে আগুন জ্বালিয়ে টিকে রয়েছেন। অপেক্ষা কেবল সীমান্ত অতিক্রম করার। এরপর ইউরোপের উন্নত জীবনের হাতছানি।

এই পাঁচশ’ তরুণ বসনিয়ার বিহাক ও ভেলিকা ক্লাদুসা শহরের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত বলে জানা গেছে রয়টার্স সূত্রে। বসনিয়ান কর্তৃপক্ষ অভিবাসন প্রত্যাসীদের এই দলটিকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। একইসঙ্গে তারা শহরের বেশ কয়েকটি অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

১৯৯০ সালের যুদ্ধের পরে বসনিয়া অভিবাসীদের বরাবরই স্বাগত জানিয়ে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি তারা অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার নীতিতে কঠোরতা অবলম্বন করতে যাচ্ছে এবং এদের বোঝা দাবি করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জাতিগতভাবে বিভক্ত বসনিয়ার সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার নেতৃত্বাধীন অঞ্চল বরাবরই অভিবাসী অভ্যর্থনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে। ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বসনিয়ার সারজেভো এবং ক্রাজিনা সীমান্তে আশ্রয় নেওয়ার দিকেই ঝুঁকেছেন।

পরিত্যাক্ত কারখানার মাটিতে কোনোরকম রাত কাটাচ্ছেন তারা, ছবি- রয়টার্সবসনিয়ান সীমান্তরক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা আজুর জিভিক বলেন, অনেকেই রাবার নৌকায় করে ড্রিনিয়া নদী ধরে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন এবং খরস্রোতা নদীতে ডুবে যাওয়ার ঘটনাও অনেক। তবু তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ইউরোপে প্রবেশের।

তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে ৫০ জনের একটি দলকে সীমান্ত পাড় হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একজন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘ইতালি আমি আসছি।’