আমিরাতি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ‘হে ফেস্টিভ্যাল’ কর্তৃপক্ষের

সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে 'হে ফেস্টিভ্যাল'-এর পক্ষ থেকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত এই সাহিত্য ও শিল্প উৎসব কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের একজন কর্মীর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে আমিরাতের সহিষ্ণুতা বিষয়ক মন্ত্রী (মিনিস্টার ফর টলারেন্স) শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান। ৬৯ বছরের শেখ নাহিয়ান দেশটির রাজপরিবারের একজন প্রভাবশালী সদস্য।noname

আমিরাতি মন্ত্রীর এমন আচরণকে ন্যক্কারজনক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে হে ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ।

হে ফেস্টিভ্যালের সভাপতি ক্যারোলাইন মিশেল বলেছেন, শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান যতদিন আমিরাতে সহিষ্ণুতা বিষয়ক মন্ত্রীর পদে যতদিন থাকছেন, ততদিন আবুধাবিতে আর এই উৎসবের আয়োজন করা হবে না।

আমিরাতি মন্ত্রীর যৌন সন্ত্রাসের শিকার কেইটলিন ম্যাকনামারা দাবি করেছেন, শেখ নাহিয়ান এ বছরের গোড়ার দিকে তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালায়।

এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটছেন কেইটলিন ম্যাকনামারা। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৬৯ বছরের শেখ নাহিয়ান।

লন্ডনের দ্যা সানডে টাইমস পত্রিকাকে ৩২ বছরের ম্যাকনামারা জানিয়েছেন, তিনি যে হামলার অভিযোগ করছেন সেটি ঘটেছিল গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন দ্বীপে এক আবাসিক ভবনে তিনি ওই যৌন সন্ত্রাসের শিকার হন।

আবুধাবিতে এ বছর প্রথমবারের মতো যে হে সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল, ওই ঘটনার ১১ দিন পর তার উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। ম্যাকনামারা ভেবেছিলেন ওই উৎসব নিয়ে কথা বলার জন্য তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

ম্যাকনামারা বলেন, তার ওপর নির্যাতনের ওই ঘটনার পরপরই তিনি বিষয়টি তার চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে জানান। আমিরাতে নিযুক্ত ব্রিটিশ দূতাবাসকেও তিনি বিষয়টি অবহিত করেন। যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস লকডাউন প্রত্যাহারের পর তিনি কেন্ট এলাকার পুলিশ স্টেশনে গিয়ে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন।

সানডে টাইমস পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সরকারি কৌঁসুলি বিভাগ (ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস) এই মামলা নেবে কিনা, তা জানার জন্য ম্যাকনামারা অপেক্ষা করছেন।

কেইটলিন ম্যাকনামারা জানান, তিনি তার ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখার অধিকার বিসর্জন দিয়ে এই ঘটনার কথা সবার সামনে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেননা তার ভাষায়, ‘আমি মনে করছি আমার হারাবার কিছু নেই।’

ঘটনার শিকার ওই নারী বলেন, ‘আমি এটা প্রকাশ করতে চেয়েছি, কারণ তার মতো ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা কী করতে পারেন সেটা আমি জানাতে চাই। তারা মনে করেন এ ধরনের কাজ করতে পারেন এবং পার পেয়ে যেতে পারেন।

কেইটলিন ম্যাকনামারা বলেন, ‘তার বাসভবন যেভাবে সাজানো তা থেকে এটা স্পষ্ট যে আমি প্রথম নারী নই এবং আমি শেষ নারীও নই। ওই ঘটনা আমার ওপর বিশাল মানসিক ও শারীরিক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু তার জন্য হয়তো এটা নিছক একটা খামখেয়ালির মতো।’

সানডে টাইমস বলছে এই অভিযোগ সম্পর্কে শেখ নাহিয়ানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। তবে লন্ডনে মানহানি মামলার আইনি প্রতিষ্ঠান শিলিংস্-এর আইনজীবীদের একটি বিবৃতি পত্রিকাটিকে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের মক্কেল এই অভিযোগে বিস্মিত এবং মর্মাহত। এই ঘটনা যখন ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তার আট মাস পর এটা জানানো হচ্ছে। এটি জানানো হচ্ছে একটি জাতীয় পর্যায়ের সংবাদপত্রের মাধ্যমে। এই ঘটনার বিবরণ অস্বীকার করা হচ্ছে।’ শিলিংস বিবিসিকেও এর বাইরে আর কিছু বলতে অস্বীকার করেছে।

হে ফেস্টিভ্যালের সভাপতি ক্যারোলাইন মিশেল ১৮ অক্টোবর টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের সহকর্মী ও বন্ধু কেইটলিন ম্যাকনামারার সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতে আবুধাবিতে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা তার ও তার পদমর্যাদার প্রতি আস্থার ন্যক্কারজনক লঙ্ঘন এবং একটা ঘৃণ্য নির্যাতনের ঘটনা।’

ক্যারোলাইন মিশেল বলেন, ‘‌শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান মন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। তিনি দেশটিতে বাকস্বাধীনতা ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠাকে আরও উজ্জীবিত করতে হে ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছিল সেই প্রচেষ্টাকে খর্ব করেছেন। এই যৌন নির্যাতনের আইনি বিচার চাওয়ার ব্যাপারে কেইটলিনের পদক্ষেপকে আমরা সমর্থন করছি। আমিরাতে যারা আমাদের বন্ধু ও অংশীদার আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা যেন শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ানের আচরণ বিশ্লেষণ করে দেখেন এবং এ ধরনের আচরণ যে অগ্রহণযোগ্য বিশ্বের মানুষকে যেন স্পষ্টভাবে সেই বার্তাটা দেন। তিনি যতদিন মন্ত্রী পদে থাকবেন ততদিন হে ফেস্টিভ্যাল আবুধাবিতে যাবে না।’ সূত্র: বিবিসি।