নতুন ভূমি আইন চালুর পর আবারও ‘শাটডাউন’ কাশ্মির

নতুন ভূমি আইন চালুর প্রতিবাদে ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির। গত মঙ্গলবার থেকে চালু হওয়া এই আইন অনুযায়ী ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে জমি কিনতে পারবে দেশটির যেকোনও নাগরিক। অঞ্চলটিতে ভারতপন্থী বলে পরিচিত রাজনীতিবিদেরাও এই আইনের সমালোচনা করে বলছেন, কাশ্মিরের ভূমি নিলামে তুলে দিয়েছে দিল্লি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।noname

গত বছর পর্যন্তও কাশ্মিরে সম্পত্তি কেনার অনুমোদন ছিলো না ভারতীয় নাগরিকদের। তবে ওই বছরের আগস্টে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার। অঞ্চলটিকে জম্মু ও কাশ্মির এবং লাদাখ নামে আলাদা দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়। বাতিল করা হয় কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার। ওই অঞ্চলের ভূমি ও চাকরির ওপর থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের বিশেষ সুরক্ষাও বাতিল করে দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার থেকে নতুন ভূমি আইন চালুর প্রতিবাদে কাশ্মিরে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন সেখানকার নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক। নতুন আইনের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন এটি কাশ্মিরের ভূতাত্ত্বিক কাঠামো স্থায়ী ভাবে বদলে দেওয়ার নীতির অংশ।

সাধারণ ধর্মঘটের কারণে শনিবার কাশ্মিরের মূল শহর শ্রীনগরের রাস্তায় টহল দিয়েছে দাঙ্গা পুলিশ। তারপরও নতুন আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কাশ্মিরের বাসিন্দারা। তাদের মতে এটা ভারতের দখলদারী উপনিবেশিক প্রকল্পের অংশ।

৫০ বছর বয়সী কাশ্মিরি ব্যবসায়ী মুস্তাক ওয়ানি বলেছেন, গত বছর পর্যন্ত আমাদের কণ্ঠ পুরোপুরি রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। তিনি বলেন, ‘নতুন আইনের বিরুদ্ধে এটাই আমাদের নীরব প্রতিবাদ। আমাদের ভাগ্য এখন ফিলিস্তিনিদের মতো-আমাদের দাস বানানো হবে, নিজেদের বাড়িতেই আমাদের কোনও সুযোগ থাকবে না, কোনও অধিকার থাকবে না। আমরা জানি না কখন আমাদের নিজ ঘর থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে আর আমরা কিছুই বলতে পারবো না।‘

৩৫ বছর বয়সী মুহাম্মদ নামে আরেক বাসিন্দা নিজের পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘গত দিন দশকে যা কিছু ঘটুক না কেন, আমাদের নুন্যতম সুরক্ষা ছিলো যে, বহিরাগতরা আমাদের নিজেদের জমি ও বাড়ির দখল নিতে পারবে না। কিন্তু এখন সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতে মনে হচ্ছে আমাদের সন্তান ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের নিজেদের ভূখণ্ডেই ক্ষমতাহীন পথচারীতে পরিণত হবে।‘

মুহাম্মদ আরও বলেন, কাশ্মিরের ওপর ভারত নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইছে। তিনি বলেন, ‘তারা হিন্দিতে আদেশ জারি করছে, চিহ্নগুলো হিন্দিতে বদলে দিচ্ছে আর আমরা তা বুঝতে পারছি না। আমরা জানি না আমাদের ভূমি, সম্পত্তি আর জীবন নিয়ে তারা কী করতে চাইছে।‘

গত বছরের আগস্টে নেওয়া পদক্ষেপের সময় কাশ্মির জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় ভারত সরকার। ইন্টারনেট, টেলিফোনসহ সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন আইনের মাধ্যমে সেই পরিস্থিতিতে কিছুটা বদল আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মিরের পুরো অংশের নিয়ন্ত্রণ দাবি করলেও আলাদা অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ভারতের নতুন আইন অনুযায়ী কাশ্মিরের যেকোনও অংশকেই কৌশলগত এলাকা ঘোষণার ক্ষমতা পেয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এর মাধ্যমে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রয়োজনে অঞ্চলটির যেকোনও এলাকাকেই আবাসান ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করতে পারবে তারা।