এবার আফগান নারীদের দমন এত সহজ না

ভয়ভীতি, হামলা ও নিপীড়নের পরেও রাস্তা ছাড়ছেন না আফগান নারীরা। অধিকার আদায়ে চলছে দফায় দফায় মিছিল। বিশ্ব মিডিয়ায় পৌঁছে দিচ্ছে বার্তা—ভয় পেয়ে চুপ থাকার সময় এখন না।

গত চার দিনে বিক্ষোভ-আন্দোলন পর্যালোচনায় এ ভবিষ্যদ্বাণী এখন করাই যায় যে আফগান নারীদের ঘরে আটকে রাখার তালেবানদের চেষ্টা এবার খুব একটা সহজ হবে না।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) কাবুলে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে একটি বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রধানত নারীদের সংগঠিত এবং এর নেতৃত্বেও নারীরাই ছিলেন। যদিও তারা তালেবানদের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বেত্রাঘাত ও মারধর করা হয় এবং গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

.মঙ্গলবার কাবুলে বিক্ষোভকারীরা পাঞ্জশির প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে হ্যাশট্যাগ #SanctionPakistan, #StandWithPanjshir, প্ল্যাকার্ড হাতে নেন এবং ‘পাকিস্তান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ছাড়ো’-এর মতো স্লোগান দেন। অনেক নারী যখন মিছিলে হাঁটছিলেন তখন ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা!’ শব্দটাই কেবল উচ্চারণ করছিলেন।

বিক্ষোভকারীরা প্রথমে পাকিস্তান দূতাবাসের বাইরে একত্রিত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী। কিন্তু কিছু সময় যেতেই প্রচুর পুরুষও মিছিলে যোগ দেন। তালেবানরা তাদের প্রতিবাদ রুখে দিতে গুলি চালায়। সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, তালেবানদের গুলির আঘাতে আশপাশের জানালা ভেঙে গেছে। তবে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

.ইরানি সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট মাসিহ আলিনেজাদ এই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে টুইটারে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি লিখছেন, ‘‘এক সাহসী আফগান নারী আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি যখন তালেবানদের দখল নিতে শুনেছিলাম, তখন প্রথমে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি নিজেকে বলেছিলাম—অধিকারের জন্য আমার লড়াইয়ের রাস্তা ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। নিজের স্বার্থেই আমি প্রায় ৪০ বা ৫০ জন নারীকে নিয়ে রাস্তায় নামার এবং প্রকাশ্যে তালেবানদের চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিই। ভয় নেই, এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ।’’

.তার কথার সত্যতা মেলে শনিবারে জোরেশোরে শুরু হওয়া প্রতিবাদ যখন মঙ্গলবারে এসে আরও শক্তিশালী রূপ নেয়। গণমাধ্যমের খবর বলছে, কাবুলে রাতে বিক্ষোভ চলছে। আফগান নারীরা এটা যথেষ্ট বুঝতে সক্ষম হয়েছে বলেই তারা সাহসিকতার সঙ্গে তালেবান এবং পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করছে।

গত শনিবার নারীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ ভাঙতে তালেবানরাও সহিংস হয়ে উঠেছিল। মঙ্গলবারের মিছিলের আয়োজকরা যারা বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তারা বলেছিলেন যে তারা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু চুপ না থেকে এখন যে কথা বলতে হবে সে বিষয়ে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

.তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর গত সপ্তাহে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে বিক্ষোভ শুরু হয়, যেখানে নারীরা তালেবানদের নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। বিক্ষোভ শেষে এক  সমাবেশে একজন বক্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার অর্জন ও টিকিয়ে রাখার জন্য বহু বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছি। এখন সেসব এক কথায় পরিত্যাগ করা অসম্ভব।’