সুরেই সন্ধান মিললো নতুন পাখি-প্রজাতির



হিশালয়ান ফরেস্ট থ্রাশপাহাড়-পর্বতে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলেন গবেষকরা। হঠাৎই তারা খেয়াল করলেন, বন থেকে ভেসে আসছে থ্রাশ প্রজাতির কোনও পাখির সুরেলা কণ্ঠ। তবে ওই প্রজাতির পাখিদের আগে এমন সুরেলা কণ্ঠে গাইতে শোনেননি তারা। তবে একী অন্য প্রজাতির কোন পাখি? সুরের এমন খোঁজ করতে গিয়েই নতুন পাখি প্রজাতির সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত এবং চীনের ভারত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নতুন এই প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। সুইডিশ ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সের অধ্যাপক পের আলসট্রমের নেতৃত্বে সুইডেন, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা পাখিটির সন্ধান পান। বিভিন্ন দেশের পাখিদের নমুনা বিশ্লেষণের পর দেখা যায় সন্ধান পাওয়া নতুন এই পাখি প্রজাতির সঙ্গে সেগুলোর মিল নেই। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, পূর্ব হিমালয়ে জন্ম নেওয়া এসব পাখির কোনও নাম নেই।
পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছে দ্য হিমালয়ান ফরেস্ট থ্রাশ, জুথেরা সালিমালি। বৃহত্তর ভারতের প্রয়াত পাখি বিশেষজ্ঞ ড. সালিম আলির নামে পাখিটির বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে।   

একক প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত থ্রাশ জুথেরা মল্লিসিমার আরও ভিন্ন দুটি প্রজাতির অস্তিত্ব উত্তর-ভারতে আছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই গবেষণাটি শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। তারা দেখতে পান মিশ্র বন এলাকায় বসবাসরত পাখিগুলো সুরেলা হয়। অন্যদিকে একই অঞ্চলে খোলা পাহাড়ের ওপর বসবাসরত পাখিরা কর্কশ হয়।

হিমালয়ান ফরেস্ট থ্রাশ প্রজাতির পাখি

উচ্চভূমি বা টিলায় বসবাস করা থ্রাশ পাখিকে আল্পাইন থ্রাশ নামে ডাকার সুপারিশ করা হয় সেসময়। এরপর পাখির গঠন, গায়কী ধরন, ডিএনএ এবং বাস্তুসংস্থানের ধরন বিশ্লেষণের পর বিজ্ঞানীরা একমত হন যে, চীনের মধ্যাঞ্চলে থ্রাশের আরেকটি প্রজাতির অস্তিত্ব আছে। এ পাখিটি আগেই সবার কাছে পরিচিত থাকলেও এটিকে থ্রাশের উপপ্রজাতি বলে বিবেচনা করা হতো। তবে নতুন অনুসন্ধানের পর বিজ্ঞানীরা এর নাম দেন সিচুয়ান ফরেস্ট থ্রাশ। হিমালয়ান ফরেস্ট থ্রাশের চেয়ে সিচুয়ান ফরেস্ট থ্রাশ আরও বেশি সুরেলা।

ডিএনএ বিশ্রেষণে দেখা যায়, এ তিনটি প্রজাতিই কয়েক লাখ বছর ধরে জিনগতভাবে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণের পর বিজ্ঞানীদের দাবি, চীনে আরেকটি অনামকরণকৃত প্রজাতি রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

স্থানীয়ভাবে হিমালয়ান ফরেস্ট থ্রাশ প্রজাতির পাখিটি পরিচিত হলেও আল্পাইন থ্রাশের সঙ্গে মিল থাকার কারণে এতোদিন ধরে পাখিটিকে আলাদা করে চেনা যায়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন পাখি প্রজাতির সন্ধান পাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। গত ১৫ বছরে দেখা গেছে বছরপ্রতি গড়ে ৫টি নতুন প্রজাতির সন্ধান মেলে। এর বেশিরভাগই দক্ষিণ আমেরিকায়। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর দ্য হিমালয়ান ফরেস্ট হলো চতুর্থ নতুন প্রজাতির পাখি আবিষ্কারের ঘটনা। সূত্র: বিবিসি, সায়েন্স ডেইলি, ফিজিক্স.অরগ

/এফইউ/বিএ/