এমনকি মৃতরাও নিরাপদ নয় বোকো হারামের কাছে

নাইজেরিয়ার এক গোরখোদকপ্রায় সাত বছর আগে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাইদুগুরিতে শুরু হয় সশস্ত্র ইসলামপন্থী সংগঠন বোকো হারামের তাণ্ডব। আর সে সময় থেকে জীবন তো দূরের কথা, বোকো হারামের কাছে যেন মৃত্যুও নিরাপদ নয়। সশস্ত্র সংগঠনটির হামলায় যারা মারা গেছেন, তারা তো চিরতরেই চলে গেছেন। ভয়াবহ হামলার বর্ণনা দিতে, বোকো হারামের তাণ্ডবের কথা জানাতে তাদের ফিরে আসার উপায় নেই। তবে সেই মানুষদের যারা সমাহিত করছেন সে গোরখোদকরা আছেন নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে। অবিরত তারা যেন লিখে যাচ্ছেন মরণগাঁথা।
এমনই এক গোরখোদক বাবাগানা মদু। তিনি জানান, আসলে মৃতরাও নিরাপদ নয় সশস্ত্র এই সংগঠনের কাছে। এক মুসলিম ধর্মীয় নেতার কবরে কোদাল দিয়ে মাটি আর বালু মেশাতে মেশাতে তিনি জানান, এ কবরটিও বোকো হারাম সদস্যরা ধ্বংস করতে শুরু করেছিল। ৩০ বছর বয়সী মদু বলেন, ‘আমরা তাদের থামাতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। তাদের বন্দুক আছে কিন্তু আমাদের কাছে তা নেই। আমাদের আছে কেবল কোদাল।’
মদু জানান, গুয়ানগে কবরস্থানে নিয়মিত কয়েকটি ট্রাকে করে সমাহিত করার জন্য মরদেহ নিয়ে আসা হয়। আবার কাউকে নিয়ে আসা হয় হত্যা করার জন্য। আর তাই একের পর এক কবর খুঁড়তে গিয়ে সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। তবে বেশ কয়েকটি শহরে সশস্ত্রদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা জোরালো হওয়ার পর কাজের চাপ কিছুটা কমেছে বলে জানান মদু ও তার সহকর্মী গোরখোদকরা।
মদু বলেন, সশস্ত্রদের তাণ্ডব যখন জোরালো ছিল তখন এখানে ২শ, ৩শ এমনকি ৪শ পর্যন্ত মরদেহ আনা হত। মরদেহগুলো আনার জন্য তিনটি ট্রাক লাগতো। কবর দেওয়া শেষ না হলে বাকি মরদেহগুলো ফেরত চলে যেতো। পরের দিন সেগুলো আবার নিয়ে আসা হতো।
মদুর হিসেব অনুযায়ী, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চলে অন্তত ১৭ হাজার মনিুষ নিহত হয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে মাইদুগুরিতে বোকো হারামের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে নাইজেরিয়ার পুলিশ ও সামরিক বাহিনী। কয়েকদিনের মাথায় বোকো হারামের নেতা মোহাম্মদ ইউসূফসহ ৮শ’ জনকে হত্যা করা হয়।
মদু যার অধীনে কাজ করছেন তার নাম বুলামা আলী। তিনিও জানান, একটা সময় গোটা গোরস্থান লাশে ভরা থাকতো। তবে এখন সেই সংখ্যা কমেছে। ৬০ বছর বয়সী আলীর সঙ্গে কাজ করা সব গোরখোদকই তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএফপি

 /এফইউ/বিএ/