ইরানের নির্বাচন

সংস্কারপন্থীদের সাফল্যে আবারও রুহানির প্রেসিডেন্ট হওয়ার আভাস

ইরানের নির্বাচনে সংস্কারপন্থীদের নিরঙ্কুশ সাফল্য আবারও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ক্ষমতায় আসবার আভাস দিচ্ছে বলে ধারণা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। নির্বাচনে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সংস্কারপন্থী-মধ্যপন্থী ও স্বতন্ত্রদের নিয়ে জোট সরকার গঠিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনের প্রথমিক ফলাফলে সংস্কারপন্থীরা আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যা তাদের সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য। তবে এটি কট্টরপন্থীদের জন্য এক বড় আঘাত।

প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি

কট্টরপন্থীরা সবচেয়ে বড় আঘাতটা পেয়েছে রাজধানী তেহরানে। চূড়ান্ত ফলাফল মঙ্গলবার প্রকাশিত হতে পারে। তবে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, রাজধানী তেহরানের ৩০টির মধ্যে সবগুলো আসনেই জয়লাভ করেছে মধ্যপন্থী এবং প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির অনুরক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংস্কারপন্থী জোট ‘লিস্ট অব হোপ’। পার্লামেন্টে তেহরানের আসনগুলোর প্রতিনিধিদের ভূমিকা বেশ শক্তিশালী।

বিশেষজ্ঞ পরিষদের নির্বাচনেও এগিয়ে রয়েছেন সংস্কারপন্থী সমর্থিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং সাবেক মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাশেমি রাফসানজানি। সংস্কারপন্থীদের এই অগ্রগতি আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুহানির দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়াকে এক ধাপ এগিয়ে রাখছে বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।  

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে ২০ জন নারী প্রার্থী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, যা একটি রেকর্ড। এদের মধ্যে রয়েছেন সংস্কারপন্থী নেতা পরবানেহ সালাহশোরি। তিনি কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, ‘হিজাব পরিধান করার বিষয়টি নারীদের ইচ্ছার পর ছেড়ে দিতে হবে। ইসলামী প্রজাতন্ত্রে এই বিষয়টি কুসংস্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এবারের নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো

যদিও ২৯০ আসনের পার্লামেন্টে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, তবে সংস্কারপন্থী, তাদের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সমর্থক মধ্যপন্থী রক্ষণশীলদের নিয়ে জোট সরকার গঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, ২৯০ আসনবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৪৪টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, ৭৯টি আসনে সংস্কারপন্থীরা এবং ১০৬টি আসনে কট্টরপন্থীরা জয়ী হতে যাচ্ছেন।

এক টুইটার বার্তায় রুহানি বলেন, ‘দেশে নতুন আবহাওয়া তৈরি হয়েছে।’ আবার সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফসানজানির অফিস থেকে করা এক টুইটার বার্তায় তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘জনগণের ইচ্ছাকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জনগণ যাদের সমর্থন দেয়নি, তাদের চলে যাওয়া উচিত।’

নির্বাচনে ভালো ফলাফলে পার্লামেন্টে রুহানির অবস্থান শক্ত হলেও এখনও সর্বশেষ ক্ষমতা থাকছে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির হাতেই। তবে এই বিজয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে হাসান রুহানি নিজের অবস্থান আরো শক্ত করেছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট খাতামি

সংস্কারপন্থীদের প্রধান নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট খাতামি। ইরানি সংবাদমাধ্যমে তার ছবি বা নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ। তিনি সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তাতে তিনি মন্তব্য করেছেন, রাজনৈতিক কর্মীদের উচিৎ ‘লিস্ট অব হোপ’-এর পেছনে জড়ো হওয়া। তার এই আহ্বান ইরানের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রভাব রাখে।

এবারের নির্বাচন দেশটির বর্তমান সরকারের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতার পর এটি প্রথম নির্বাচন হওয়ায় তাতে সরকারের পররাষ্ট্রনীতিরও বিশেষ প্রভাব থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাই বিশ্ব অর্থনীতির দেশগুলোও মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য রাখছে ইরানের নির্বাচন এবং রাজনীতির ওপর। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এসএ/বিএ/