হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৬ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি ট্রাম্পের

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বন্দ্বে নতুন মোড় নিয়েছে। বুধবার (৪ জুন) এক ঘোষণার মাধ্যমে আগামী ছয় মাসের জন্য হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে বিদেশিদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

আদেশের যুক্তি হিসেবে ট্রাম্প বলেছেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার খাতিরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের হার্ভার্ডে পড়তে দেওয়া মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থি বলেও দাবি করেন তিনি।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণায় অভিযোগ করা হয়, বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী ভর্তির নামে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে মাত্রাছাড়া সম্পর্ক গড়ে তুলছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। এসব বিবেচনা করেই হার্ভার্ডে ভর্তিচ্ছু বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি প্রেসিডেন্টের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই নাখোশ হয়েছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের আদেশকে প্রতিশোধমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। তারা আরও জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের রক্ষায় তারা সবসময় সচেষ্ট আছে।

হার্ভার্ডে চলমান শিক্ষাবর্ষে প্রায় সাত হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন, যা মোট শিক্ষার্থী সংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ।

চলমান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত এপ্রিলে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কিছু তথ্যের জন্য হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায় হোয়াইট হাউজ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাতে অসম্মতি জানালে শুরু হয় দুপক্ষের টানাপড়েন।

হোয়াইট হাউজের অভিযোগ, অবৈধ বা বিপজ্জনক কাজে যুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রদানে হার্ভার্ড ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এই অভিযোগের বিরোধিতা করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী হার্ভার্ডের অধিকার লঙ্ঘন এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এরমধ্যেই হার্ভার্ডের জন্য সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি ডলার বাতিল করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তারওপর শিক্ষার্থী গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আগুনে ঘি ঢেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সর্বশেষ আদেশ জারির আগেও এক দফা আইনি লড়াই হয়ে গেছে ট্রাম্প প্রশাসন ও হার্ভার্ডের মধ্যে। মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার একটি প্রচেষ্টা নিলে তাতে বাগড়া দেন এক মার্কিন বিচারক। তার রায়ের পরই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জারি করেই ছাড়লেন ট্রাম্প।

আদেশনামায় আরও বলা হয়, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের জন্য আগ্রহী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্যও ভিসা স্থগিতকরণের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এছাড়া, হার্ভার্ডে এখন অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভিসা স্থগিতের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ছয়মাসের জন্য ভিসা স্থগিতকরণ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, এর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হতে পারে।