ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই অভিযানে নিহত হয়েছেন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
শুক্রবারের হামলায় নিহত গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সালামি ছিলেন সবচেয়ে উচ্চপদস্থ নেতা। সালামিসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ আইআরজিসি কর্মকর্তারা সরাসরি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে পরামর্শ দেওয়ার অধিকার রাখেন।
এই হামলায় এখন পর্যন্ত দেশটির সেনাপ্রধান বাকেরি, উপ-সেনা প্রধান রশিদ এবং একাধিক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
সালামি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন তার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য। মাত্র মাসখানেক আগেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, তাদের ওপর তেল আবিব বা ওয়াশিংটন হামলা করলে নরকের দ্বার খুলে দেবে তেহরান।
রেভল্যুশনারি গার্ডসে সালামির প্রায় ৪৫ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮০ সালে, ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়। দিনে দিনে নিজের দক্ষতা ও আনুগত্যের পরিচয় দিয়ে তিনি সামরিক ক্যারিয়ারে ওপরে উঠতে থাকেন। ২০০৯ সালে তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডসের উপপ্রধান এবং একদশক পর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
চলতি শতাব্দীর শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ইরানি পারমাণবিক কর্মসূচিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তার নেতৃত্বকালীন সময়েই গত বছর তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলে প্রথমবারের মতো সরাসরি সামরিক হামলা চালায় ইরান।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মাস কয়েক ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। তবু ইসরায়েলের সঙ্গে চাপা উত্তেজনা কমার কোনও সম্ভাবনা দেখা যায়নি। এর প্রেক্ষাপটে কেবল গতকালই সালামি বলছিলেন, যে কোনও রকম প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি এবং পরিণতির জন্য ইরান প্রস্তুত আছে। শত্রুপক্ষ (ইসরায়েল) মনে করে, ইসরায়েলি অবরোধে থাকা অসহায় ফিলিস্তিনিদের মতো করে আমাদেরও সামলাতে পারবে। (কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না) আমরা অভিজ্ঞ এবং যুদ্ধে পরীক্ষিত।
ইরানের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে আগেও বড়াই করে বক্তব্য দিয়েছেন সালামি। একবার তো বলেই বসেছিলেন, ইরান বৈশ্বিক পরাশক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
২০১৯ সালে সিরিয়ায় ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েল হামলা চালালে সালামি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জায়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন।
গত বছর সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি হামলায় দুই জেনারেলসহ রেভল্যুশনারি গার্ডসের সাত জন সদস্য প্রাণ হারান। ওই ঘটনার পরও প্রায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করে সালামি বলেন, আমাদের সাহসী সেনারা জায়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠীকে উপযুক্ত সাজা দেবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে ইরানে ক্ষমতার পালাবদলের আগ পর্যন্ত তেল আবিব ও তেহরান ছিল পরস্পর মিত্র। তবে এরপর ইসলামিক শাসনের আমলে পরিস্থিতি এতটাই শত্রুভাবাপন্ন হয়ে পড়ে যে, বর্তমান ইরানি শাসকগোষ্ঠী ইসরায়েলের অস্তিত্ব মেনে নিতেই রাজি নয়।