ইরানের হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতালের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালের ওই হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি হাসপাতাল তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল না বলে দাবি করছে তেহরান। দেশটির সরকার পরিচালিত সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ইসরায়েলের বীরসেবাতে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি ছিল তেহরানের মূল লক্ষ্য।
বার্তাসংস্থা ইরনা বলেছে, হাসপাতালের কাছাকাছি গ্যাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্কে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক গোয়েন্দা শিবির রয়েছে। এছাড়া, কাছাকাছি আইডিএফ এর একটি কার্যালয় রয়েছে। সামরিক অবকাঠামোগুলো ছিল হামলার প্রধান লক্ষ্য। বিস্ফোরণের আঘাতে হাসপাতাল সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেবল।
গ্যাভ-ইয়াম নেগেভ টেকনোলজি পার্কের ওয়েবসাইট যাচাই করে বিবিসি জানিয়েছে, এটি উল্লিখিত আইডিএফ কার্যালয় এবং বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত।
এদিকে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের নাতানজ পারমাণবিক ক্ষেত্রের রিঅ্যাক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
সপ্তাহখানেক ধরে চলা ইসরায়েলি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের প্রায় পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
দেশটির পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে চালানো হামলায় তাদের পরমাণু সক্ষমতা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে কয়েকশ বেসামরিক ইরানি প্রাণ হারিয়েছেন।
এর জবাবে ইরানের চালানো পাল্টা হামলায় দু ডজন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
বুধবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংসের মাধ্যমে ধাপে ধাপে হুমকি নিশ্চিহ্ন করছে ইসরায়েল।
তিনি বলেছেন, ইরানের শাসক গোষ্ঠীর ক্ষমতার সব প্রতীক- পারমাণবিক অবকাঠামো, ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার এবং সব প্রধান কার্যালয়ে আমরা আঘাত করেছি।
এদিকে, ইসরায়েলের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে যাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। এই সংঘাতে ওয়াশিংটন প্রত্যক্ষভাবে যোগ দিলে, পরিস্থিতি মারাত্মক দিকে মোড় নিতে পারে। তবে, মার্কিন প্রশাসন এই সংকটে নিজেরা জড়াবে কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বুধবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ইরানে আমি হামলা করতেও পারি আবার নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করব।
এরপর ভিন্ন এক বক্তব্যে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানি কর্মকর্তারা বৈঠক করতে ওয়াশিংটন আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এতে তিনি সবুজ সংকেত হয়ত দেবেন, তবে এখন আলাপ-আলোচনার জন্য দেরি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে, ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার দাবির জবাবে এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে ইরান। সেখানে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ইরানিরা কখনও আত্মসমর্পণ করবে না। মার্কিনিদের জানা উচিত, হস্তক্ষেপ করলে তাদের যে ক্ষতি পোহাতে হবে, তা কখনই পুষিয়ে নিতে পারবে না।
সাম্প্রতিক হামলার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। বরাবর এই দাবি ইরান অস্বীকার করে এসেছে এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা কখনও তেহরানের কথাকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করেনি। তবে ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর গত বিশ বছরে প্রথমবারের মতো সংস্থাটি দাবি করে, পারমাণবিক অস্ত্র না বানানোর চুক্তির (নন প্রলিফারেশন ট্রিটি বা এনপিটি) শর্ত ভঙ্গ করেছে তেহরান।