গত ৩ বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করেছে রাশিয়া

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে গত তিন বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে রুশ সরকার। রাশিয়ার দুর্গ অর্থনীতি কাঠামোতে ( ফরট্রেস রাশিয়া ইকনোমিক মডেল) রূপান্তরের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে বুধবার (৯ জুলাই) প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম কোমেরসান্টে এই গবেষণাটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

যুদ্ধশুরুর পর অনেক পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান রুশ বাজার থেকে পালিয়েছে। তাদের ফেলে যাওয়া সম্পদ যেমন রুশ কোষাগারে জায়গা পেয়েছে তেমনি কিছু প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুশ ব্যবসা রাষ্ট্র দখল করে নিয়েছে।

ইউক্রেনের সামরিক আগ্রাসন শুরুর প্রতিক্রিয়ায় মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। এগুলোকে বরাবরই অবৈধ পদক্ষেপ বলে অভিযোগ তুলে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই সময়ের মধ্যে একের পর এক ডিক্রি জারি করে জার্মান ইউনিপার থেকে শুরু করে ডেনিশ কার্লসবার্গসহ অসংখ্য পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান জব্দের আয়োজন সম্পন্ন করেছেন তিনি।

পশ্চিমার পাশাপাশি নিজস্ব একাধিক প্রতিষ্ঠানও জব্দ করেছে ক্রেমলিন। কৌশলগত সম্পদ, দুর্নীতির অভিযোগ, বেসরকারিকরণের নীতি লঙ্ঘন অথবা অব্যবস্থাপনার অভিযোগে এগুলো জব্দ করা হয়।

মস্কোভিত্তিক আইন প্রতিষ্ঠান এনএসপি জানায়, গত তিন বছরে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন রুবলের  বা প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদ গত তিন বছরে ‘জাতীয়করণ’ হয়েছে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার বাজারভিত্তিক অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু ৯০-এর দশকে দুর্নীতি, আর্থিক বিশৃঙ্খলা ও অপরাধমূলক সিন্ডিকেট সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়।

পুতিনের শাসনামলে দেশটির অর্থনৈতিক মুক্তি এবং প্রবৃদ্ধি এসেছিল। সেসময় রাশিয়ার অর্থনীতি ১৯৯৯ সালে ২০০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০০৮ সালে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়।

তবে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়, এবং ২০২২ সালের ইউক্রেন আগ্রাসনের পর তা আরও তীব্র হয়। এরপর থেকে অর্থনীতি নিয়ে অনেকটাই বেকায়দায় আছে মস্কো।

তবে পুতিনের মতে, পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর প্রস্থান দেশীয় উৎপাদনকারীদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে এবং যুদ্ধকালীন বাস্তবতা অনুযায়ী দেশীয় শিল্পকে উন্নত করতে বাধ্য করেছে। তিনি ‘পুরোনো বৈশ্বিকীকরণ’ এর বাইরে গিয়ে একটি নতুন উন্নয়ন মডেলের পক্ষে মত দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রাশিয়ার অর্থনীতির আকার ছিল ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুলনায় অনেক ছোট।