উল্লেখ্য জাপানে গত বৃহস্পতিবার প্রথম ভূকম্পনটি অনুভূত হয়। সে সময় ৯ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। ওই ভূমিকম্পটির একদিন পর শুক্রবার রাতে জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় নগর কুমামোতোয় ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বৃহস্পতিবারের ভূমিকম্পের চেয়ে পরের ভূমিকম্পটি বেশি প্রবল এবং আরও বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। ভূমিকম্পের কারণে ভূমিধস ঘটেছে ও রাস্তাঘাট ভেঙ্গে পড়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েক দফা এসব ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুমামতো প্রদেশের কিয়ুশু এলাকা।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দিনের শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জাপানে চলছে উদ্ধারকাজ, নিহত ২৪
শনিবার রাতভর উদ্ধার তৎপরতা চালানোর পর রবিবারও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়াদের উদ্ধারে মরিয়া হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। বিভিন্ন জায়গায় ভূমিধসের কারণে দুর্গম পার্বত্য এলাকার গ্রামগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় ১ লাখ মানুষ বিদুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ৪ লাখ বাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং আহত দুইশো জনের অবস্থা ভালো নয় বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার রাতে উদ্ধারকারীরা খালি হাতে অভিযান চালিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত অবস্থায় বেশ কয়েকজন বৃদ্ধকে টেনে বের করে এনেছেন।শনিবার মিমিয়াসোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধ্বস্ত অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ১০ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। মিনিমিয়াসোর এক গ্রামের আটজন লোক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন বলে জাপানের সরকারি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে’র খবরে বলা হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অাবে বলেন, ‘আত্মরক্ষা বাহিনী, পুলিশ এবং দমকলকর্মীরা একসঙ্গে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকারীদের সংখ্যা ২৫ হাজারে উন্নীত করার পাশাপাশি সরকার সম্ভাব্য সবরকমের ব্যবস্থা নেবে।’
শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে শিনজো আবে আরও বলেন, ‘যে বৃষ্টি ও বাতাস শুরু হয়েছে তা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’ কিয়ুশু অঞ্চলে রাতভর উদ্ধার অভিযান চালানো অনেক কঠিন কাজ বলেও স্বীকার করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইকুয়েডরে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত ২৮, জরুরি অবস্থা জারি
জাপানের মাশিকি থেকে বিবিসির নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সেখানে ধূ ধূ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, প্রচন্ড ঠান্ডা, এবং সেখানে কেউ নেই। এলাকাটি থাকার জন্য নিরাপদ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে ৩০ সেকেন্ড হাঁটলে দেখা যাবে বাড়ির পর বাড়ি ভেঙে পড়ে আছে। এগুলোর বেশিরভাগই একতলা বাড়ি।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর জাপানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রই অক্ষত রয়েছে। তবে কোনও ধরনের ক্ষতি হয়েছে কিনা তা নিরূপণ করতে সনি, টয়োটা, নিশানের মতো কোম্পানিগুলোর কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান
/এফইউ/বিএ/