মুগাবের অবসান, কে হচ্ছেন জিম্বাবুয়ের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?

জিম্বাবুয়ের পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার হঠাৎ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ৩৭ বছর ধরে দেশটির ক্ষমতায় থাকা রবার্ট মুগাবে। তার পদত্যাগের পর জিম্বাবুয়ে জুড়ে উল্লাসে মেতে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। আলোচনা চলছে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক সপ্তাহ আগে মুগাবের বরখাস্তকৃত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়া হচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে বহিষ্কৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন

মুগাবে তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং নির্বিঘ্নে ক্ষমতার হস্তান্তরের সুযোগ করে দিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে পদত্যাগপত্রে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ ছিল না।

জিম্বাবুয়ের সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেলেকেজেলা ফোকো। তিনি মুগাবের স্ত্রী গ্রেসের সমর্থক বলে পরিচিত।

দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার জ্যাকব মুডেন্ডা জানান,  নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বুধবারেই নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নিতে পারেন।

স্ত্রী গ্রেসকে দেশটির ক্ষমতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া হিসেবে এমারসনকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। এরপরই জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক সংকটের শুরু। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে সেনাবাহিনী জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায় এবং প্রেসিডেন্টকে গৃহবন্দি করে। এরপর জনগণের দাবির মুখে মুগাবেকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় দেশটির ক্ষমতাসীন দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (জানু-পিএফ)। নতুন নেতা হিসেবে বরখাস্ত হওয়া সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসনকে নির্বাচিত করা হয়। একইসঙ্গে দলটি মুগাবে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল। আলটিমেটামের সময় শেষ হলে মঙ্গলবার সংসদে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর পদত্যাগ করেন মুগাবে।

জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতাযুদ্ধে লড়াই করেছেন এমারসন

ধারণা করা হচ্ছে, বরখাস্তের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া এমারসনই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন।  সাবেক নিরাপত্তা প্রধান এমারসন কুমির হিসেবে পরিচিত। তিনি মুগাবের ঘনিষ্ঠদের একজন ছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের দমনে বড় ভূমিকা ছিল তার। সেপ্টেম্বরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মুগাবেকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছেন এমারসন। তাকে সমর্থন করছে সেনাবাহিনী।

এছাড়া জিম্বাবুয়েতে অনেকেই জানতেন মুগাবের পর প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন এমারসন। মুগাবেও প্রথমদিকে তাকে সমর্থন করেছিলেন সরকার ও দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে। সবাই ভেবেছিলেন, এমারসনই হচ্ছেন তার উত্তরসূরী। পরে অবস্থান বদলান মুগাবে। বরখাস্তের পর ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন এমারসন। তার হয়ে সেনাবাহিনী দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে।

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এমারসন দায়িত্ব নিলেও জিম্বাবুয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হবে না। যারা এটা প্রত্যাশা করছেন তারা বড় ধরনের ভুল করছেন। অনেকেই মনে করেন, দেশটির অনেক হত্যাকাণ্ডের পেছনে এই ব্যক্তির হাত রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।